একটি ঘটনা দিয়ে শুরু করি। ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপ ২০১৮। শুরু হতে যাচ্ছে আর কিছু দিন পর। আমি নতুন মোবাইল কিনবো। নচ ডিস্প্লে। কেনার ইচ্ছে হচ্ছে Huawei Nova 3i, এবং সেই উদ্যেশ্যেই বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স এ গেলাম। ইচ্ছে হচ্ছে নিল কালার কিনবো, কেননা এটা বিজকোপের ব্র্যান্ড কালার। সমস্যা হচ্ছে নীল রঙের সেট মার্কেট আউট। বেশির ভাগ দোকানে এই মডেলটাই নেই, দুই একটা দোকানে যাও পেলাম, তবে কাল রঙের। আমি অনেক কনফিউজড কী করা যায়। তখন ভিভো খুব মার্কেটিং ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছিল। ডিজিটাল এবং ট্রেডিশনাল দুই যায়গাতেই। মনে হল ভিভোর সেট গুলো একটু দেখি। একটা সেট ভালই লাগলো, ভিভো – ভি ৯। সে সময়ের সব চাইতে ট্রেন্ডি সেট ছিল, মার্কেটে নতুন এসেছে।
আমার কাছে তখন পর্যন্ত মনে হচ্ছিল এটি চাইনিজ একটি ছোট ব্র্যান্ড। অনেকটা চায়না চায়না যে ফিলিংটা আসে, ওরকম। তাই কিনবো কী কিনবো না, এটা নিয়ে আমি অনেক সন্দিহান। হঠাৎ করে সেলস প্রফেশনাল আমাকে বললেন, এবার ওয়ার্ল্ডকাপ ফুটবলের টাইটেল স্পন্সর কিন্তু ভিভো। এটা শুনার পর আমার মনের মধ্যে একটা ব্যাপক পরিবর্তন আসলো। মনে হল চাইনিজ কোম্পানি হলেও যতটুকু ছোট প্রতিষ্ঠান মনে করেছিলাম আসলে বেপারটা হয়ত এমন না। নতুন ব্র্যান্ড, কিন্তু বড়। বড় ইনভেস্টমেন্ট নিয়েই মার্কেটে এসেছে। তাই আমি সেটটি কনফিডেন্টের সাথেই কিনে ফেলি এবং এখনো ভাল সার্ভিস দিচ্ছে।
যাই হোক আমার মুল আলোচনা ভিভো সেট নিয়ে না, আমি বুঝাতে চেয়েছি, ব্র্যান্ড পার্সেপশন, ব্র্যান্ড রিকগনেশন এবং ব্র্যান্ড এওয়ারনেস পার্চেস ডিসিশনে কী রকম প্রভাব ফেলে।
আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা ব্র্যান্ড এওয়ারনেস নিয়ে আলোচনা করাবো।
ব্র্যান্ড এওয়ারনেস আসলে কী?
যদি এক কথায় লিখি, তাহলে ব্র্যান্ড এওয়ারনেস বলতে আমরা বুঝি আপনার ব্র্যান্ড আপনার টারগেট গ্রুপের কাছে কতটুকু পরিচিত এবং কতটুকু ভ্যালু এবল। আপনার ব্র্যান্ডের নাম শুনলেই সে কী আপনাকে রিকগনাইজ করতে পারে। আপনি যত বেশি পরিচিত আপনি তত বেশি কম্পেটিটিভ এডভান্টেজ পাবেন। বেশি পরিচিত ব্র্যান্ডগুলোকে আমরা পপুলার ব্র্যান্ড, অথবা ট্রেন্ডি ব্র্যান্ড বলে থাকি।
একটা উদাহরন দিতে পারি। মিনারেল ওয়াটার বা ড্রিংকিং ওয়াটার। এখানে আসলে পানির টেস্ট কিন্তু প্রায় একই রকম। আবার ড্রিংকিং ওয়াটারের ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় দরকার যেটা তা হচ্ছে এর সেফটি। এটা কতটুকু বিশুদ্ধ। এখন বাজারে সব ব্র্যান্ডের পানিই কিন্তু আপনার দরকার যেটা তা পুরন করতে পারবে। তারপরেও এক এক ব্র্যান্ডের চাহিদা কিন্তু এক এক রকম। আবার কোকাকোলা এবং পেপসি যখন যথাক্রমে কিনলে এবং একুয়াফিনা নিয়ে আসলো তখন কিন্তু অনেক ব্র্যান্ডের বিক্রিই তুলনা মুলক ভাবে কমে গিয়েছে।
এর কারন কী?
এর কারন হচ্ছে কাকা কোলা এবং পেপসিকো অনেক আগে থেকেই মার্কেটে তাদের সফট ড্রিংকস গুলোর জন্য পরিচিত। এই দুইটা ব্র্যান্ডকে কারো সামনে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। আর যেহেতু তাদের ইতি মধ্যেই যথেষ্ট ব্র্যান্ড পরিচিতি আছে, তারমানে তারা কম্পেটিটিভ এডভান্টেজ পেতে যাচ্ছে।
মানুষ মুলত পরিচিত জায়গা থেকে কিনতে পছন্দ করে। পরিচিত ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট কিনতে পছন্দ করে। কখনো কখনো মানুষ নিজেকেই কোন একটি স্পেসিফিক ব্র্যান্ডের কাস্টমার হিসেবে পরিচিত করাতে চায়। সেই কমিউনিটির অংশ হতে চায়, নিজেকে সেই ব্র্যান্ডের একজন প্রতিনিধি, এম্বাসেডর মনে করে থাকে। যেমন এপল কমিউনিটি। অনেকেই নিজেদেরকে এপল পিপল হিসেবে পরিচিত করতে পছন্দ করে। আপনি একজন এপল ব্যাবহারকারির সামনে এপল নিয়ে খারাপ কিছু বললে দেখবেন তারা এটার বিরোধিতা করবে। কেননা তারা নিজেদেরকে এপল এর একটি অংশ মনে করে।
একই রকম অবস্থা আপনার ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রেও হতে পারে, যদি আপনি ব্র্যান্ড এওয়ারনেস নিয়ে কাজ করেন। আপনার ব্র্যান্ড যত বেশি মানুষের কাছে পরিচিত হবে, আপনার তত নতুন ক্রেতা বাড়ার সম্ভাবনা বাড়বে। যত নতুন ক্রেতা বাড়বে, তত পুরানো ক্রেতারা প্রাউড ফিল করবে এই ব্র্যান্ডের কাস্টমার হিসেবে। সবাই বড় ব্র্যান্ড গুলোর অংশ হতে চায়। আর এখানেই আপনার ব্র্যান্ড পরিচিতি কাজে আসবে যার জন্য আপনার ব্র্যান্ড এওয়ারনেস ক্যাম্পেইন নিয়ে ভাবতে হবে।
বিভিন্ন রকমের মার্কেটিং ক্যাম্পেইন সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়তে পারেন।
৪৬৫+ সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট আইডিয়া পেতে এখানে ক্লিক করুন।
পরিশেষে ব্র্যান্ড এওয়ারনেস বাড়ানোর জন্য অনেক কিছুই করা যেতে পারে। এর উপর একটি ভিডীও বানাচ্ছি, আশা করছি আগামি সপ্তাহেই আপনাদের সাথে তা শেয়ার করতে পারবো।
ভিডীওটি পেতে কানেক্টেড থাকুন আমার ফেসবুক গ্রুপে।