আপনি কি কখনো একূলও গেল ওকূলও গেল ধরনের অবস্থা দেখেছেন?
আমি দেখেছি অসংখ্যবার!
অনলাইন প্রফেশনের হাইপে পড়ে অনেককেই ঝরে পড়তে দেখেছি। অনেকেই আছেন, চাকরি ছেড়ে দিয়ে অনলাইন প্রফেশনে ঢুকেছেন, তারপর অনুধাবন করেছেন, ঘরে বসে কাজ করা এতো সহজ কিছু না। অনেককেই বলতে শুনেছি, কারো থেকে কিছু টাকা ধার করে আমাজন নিস সাইট বানাবো, সেই সাইট একসময় টাকার মেশিনের মতো টাকা দিতে থাকবে। সাইট বিক্রি করবো, তারপর সেই টাকা দিয়ে আরো ৫ টা সাইট বানাবো। সেখান থেকে একটা একটা করে বিক্রি করবো, আর গাড়ি, বাড়ি হতেই থাকবে।
আমি বলছি না যে আমাজন নিস সাইট থেকে বাড়ি, গাড়ি করা যায়না। অবশ্যই যায়। অনেকেই আছেন যারা অনেক ভালো করছেন এবং সুখে আছেন। কিন্তু আরও একটা বড় দল আছেন, যারা কিছুই করতে পারেননি। আর ৮০/২০ রুল হিসেবে এটা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যাটা তখন হয় যখন আমরা ধার দেনা করে নেমে পড়ি।
Napoleon একটা কথা বলেছিলেন, বিজনেস কখনো ডিফেন্সিভ হয়না। তার মানে আপনাকে এগ্রেসিভ হতে হবে। রিস্ক নিতে হবে। কিন্তু তা হতে হবে ক্যালকুলেটিভ। আর এটাতেই আমরা যত গন্ডোগল বাধাই।
নিচের ছবিটা দেখতে পারেন।
ছবিটার বর্ণনা দেয়ার দরকার আছে কি?
অনলাইনে আসলে অনেক কিছুই করার আছে। এগুলোর নাম আমার বলার দরকার নেই। এক-এক বার এক-এক হাইপ উঠেছে এবং মানুষ সেখানেই গড্ডলিকা প্রবাহের মতো ছুটেছে। সেখান থেকে অনেকেই অনেক ভাল করেছে এবং সেই হাইপগুলো ছিল তাদের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। এখন পর্যন্ত আমাদের দেখা যে হাইপগুলো বাংলাদেশের অনলাইন ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিল সেগুলো যদি একটু মনে করার চেষ্টা করিঃ
- ফ্রীল্যান্সিং
- ইকমার্স
- থিম
- এফিলিয়েট মার্কেটিং
- আমাজন
- সিপিএ
- ভিডিও মার্কেটিং / ইউটিউব
- প্রিন্ট অন ডিমান্ড
বিশ্বাস করুন, সবগুলোই অনেক বড় ইন্ডাস্ট্রি। এখানে নলেজএবল হতে পারলে অনেক কিছুই করা যাবে। এখান থেকে যেকোন একটা নিয়েই আপনি বাড়িতে বসে অনেক বড় বিজনেস দাড় করিয়ে ফেলতে পারবেন। কত বড়? অনলি স্কাই ইস দি লিমিট!
তাহলে সমস্যা কোথায়?
সমস্যা ঐ উপড়ের ছবির মত।
এবার সমস্যার একটু সমাধান দেয়ার চেষ্টা করি।
আপনার সকল সমস্যার সমাধান শুরু হবে প্রশ্ন দিয়ে। আমরা যখনই কোন সমস্যায় পড়ি, তখনই প্রশ্ন চলে আসে, এটা কেন, ওটা কেন, এখন কিভাবে কি করা যায় ইত্যাদি। কিন্তু এই প্রশ্নগুলো যদি আগে থেকেই নিজেকে নিজে করা যায়, এবং তার উত্তর বের করা যায় তাহলে সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনাই অনেক কমে যায়, অথবা পড়লেও তার সমাধান অনেকটাই প্রস্তুত থাকে। তাই নিচের প্রশ্ন গুলো দিয়ে শুরু করুন। তাহলেই বুঝে যাবেন আপনার অনলাইন ইন্ডাস্ট্রিতে আসা উচিত হবে কিনা? অথবা আসলেও কোন ইন্ডাস্ট্রি আপনার জন্য উপযুক্ত।
১# আপনি কেন অনলাইন বিজনেস / প্রফেশনে আসতে চাচ্ছেন?
- টাকা কামানো যাবে বলে?
- অনলাইন ওয়ার্ল্ড ভাল লাগে ( টুল, চ্যানেল, কমিউনিটি )
প্রশ্নটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন। আমার পরিচিত অনেকেই আছেন, যাদের কম্পিউটারের উপর তেমন আগ্রহ নেই কিন্তু তারা টাকা আছে এই ভেবে এই ইন্ডাস্ট্রিতে মুভ করে। কিন্তু যেভাবে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার কথা, সেটা তাদের দিয়ে হয় না। ফলাফলস্বরূপ তারা হয়তো সংগ্রাম করে টিকে থাকতে পারবে, কিন্তু একটা নির্দিষ্ট গন্ডির বাইরে যাওয়া তাদের জন্য কষ্টকর।
২# আপনার ইনকাম গোল কী?
আপনার প্রফেশন থেকে কিভাবে আয় করবেন সে সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারনা থাকা দরকার। পরবর্তী পাঁচ বছরে আপনি কতটুকু উপার্জন করতে চাচ্ছেন ভেবেছেন কি? পাঁচ বছরে কতোটুকো উপার্জন করবেন ভাবুন। সেটাকে প্রতি বছর হিসেবেও ভাঙতে পারেন। তারপর একটু খোজখবর নিয়ে দেখুন এভারেজে এই ইন্ডাস্ট্রি থেকে কেমন কামানো সম্ভব। এভারেজ ডাটা থেকে আপনি এনালাইজ করলে বেটার ধারনা পাবেন। কেননা কিছু কিছু ব্যতিক্রম থাকতে পারে, আর আপনি শুধু সেটাকে ফোকাস করলে হবে না।
একজন ডাটা এন্ট্রি প্রফেশনালের এভারেজ ইনকাম একজন সার্টিফাইড প্রোগ্রামারের সমান হবে না। তাই ইন্ডাস্ট্রি টু ইন্ডাস্ট্রি ডাটা ভেরি করবে।
৩# আপনার কতটুকু সময়, অর্থ, রিসোর্স ইনভেস্ট করার সামর্থ / ইচ্ছে আছে?
এবার যেহেতু কত টাকা আয় করতে চাচ্ছেন এ ব্যপারে পরিষ্কার ধারনা আছে সুতরাং আপনার রিসোর্স কতটুকু আছে সেদিকে লক্ষ করুন। রিসোর্স মানে কিন্তু শুধুই টাকা নয়। আপনার সময়, আপনার মেধা সবকিছুই রিসোর্স। আপনি এর কতটুকু ব্যয় করতে পারবেন ঠিক করুন। ধরেন আপনি ইকমার্স বিজনেস করবেন। তাহলে তার জন্য আপনার ইনভেস্টমেন্ট কতটুকু বরাদ্দ করবেন অথবা কতটুকো ব্যয় করতে ইচ্ছুক ঠিক করুন। আপনি কি একাই কাজ করতে পারবেন নাকি কারও সাহায্য লাগবে? যদি লাগে তাহলে সেটা কি আপনার আছে। কাজের জন্যা জায়গা লাগবে? যদি লাগে তা কি আছে? নতুন কম্পিউটার অথবা অন্য কোন ডিভাইস লাগবে কি?
ইনভেস্টমেন্ট সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারনা ছাড়া মুভ করলে মাঝ পথে বিজনেস ছেড়ে দেয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
৪# ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার পরিচিত এমন কেউ আছেন যিনি আপনাকে তার অভিজ্ঞতা দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন?
আপনার চলার পথে সবসময় কারো না কারো ইনফ্লুয়েন্স দরকার হবে। সেটা পরোক্ষ এবং প্রত্যাক্ষ দুইভাবেই হতে পারে। আপনার পরিচিত অথবা কাছের মানুষের মধ্যে এমন কেউ আছেন যিনি আপনাকে তার অভিজ্ঞতা দিয়ে সাহায্য করতে পারবে? সেটা হতে পারে ফ্রী অথবা পেইড। যেমন আমি যখন এসইও শুরু করেছিলাম, আশে পাশে সাহায্য করার মত কেউ ছিল না, তাই ভরসা ছিল কিছু অভিজ্ঞ ক্লায়েন্ট এবং ফোরাম। আপনাদের জন্য কিন্তু এখন এই যায়গায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। অনেক কোর্স রয়েছে, ফেসবুক গ্রুপ আছে, ওয়েবিনার হচ্ছে, মিট-আপ হচ্ছে।
৫# আপনার বিজনেস বা ক্যরিয়ার গ্রো করার জন্য যে দক্ষতাগুলো দরকার সেগুলো কি আপনার আছে?
বিজনেস, ক্যরিয়ার কখনই শুধু একটা স্কিলের উপর নির্ভর করে আগে বাড়ে না। আপনার মূল স্কিলের সাথে সাথে আপনার সফট স্কিল নিয়ে ভাবতে হবে, তা ডেভেলপ করতে হবে। ধরুন আপনি একটা টিম নিয়ে কাজ করছেন। আপনাকে শিখতে হবে টিমকে নিয়ে কিভাবে কাজ করবেন? টিম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আমার হোস্ট করা এই ওয়েবিনারটা দেখতে পারেন। আপনাকে জানতে হবে কিভাবে সেলস জেনারেট করতে হয়। কিভাবে লিড কালেক্ট করতে হয়। কিভাবে লিডকে কনভার্ট করতে হয়। সেলিং এর উপর আমার এই ওয়েবিনারটা দেখতে পারেন।
তাই শুরু করার আগেই একটু এনালাইসিস করুন আপনার স্ট্রেংথ কোথায়, দূর্বলতা কোথায় যা আপনাকে আগে বাড়তে সাহায্য করবে।
তাই আমার সাজেশন হচ্ছে আমার জন্য যা ভাল আপনার জন্য তা ভাল নাও হতে পারে। বাইরের দেশে Gypsy বাইকগুলো অনেক জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে কিন্তু তা না। কেননা বাংলাদেশের রাস্তা গুলো তুলনামুলকভাবে অনেক সরু, এখানে Gypsy নিয়ে টার্ন করতে একটু বেশি স্পেস লাগে যা আপনার জন্য সুখকর হবে না। তাই শুধু মাত্র হাইপের খপ্পরে পরে সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার নাই। নিজেকে নিজে উপরের প্রশ্ন গুলো করুন। তারপর সেই অনুপাতে আগে বাড়ুন। সফলতা তুলনামুলক ভাবে দ্রুত আসবে, ডিমোটিভেট হবার সম্ভাবনা কমে যাবে।