ডিজিটাল মার্কেটের ট্রেন্ড গুলো সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন? অথবা এর ডিমান্ড, অপরচুনিটি? এখন অনেককেই দেখবেন যারা নিজেদেরকে ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে তৈরি করতে চাইছে। অনেকে বুঝেই চাইছে, অনেকে না বুঝে।
আবার বাংলাদেশের সব ছোট বড় ব্র্যান্ডগুলো এখন ডিজিটাল মার্কেটিং এ ইনভেস্ট করছে। তারা ডিজিটাল মার্কেটার খুজছে। দক্ষ ডিজিটাল মার্কেটার খুজছে। বাইরের দেশ গুলোতো অনেক আগে থেকেই ডিজিটাল মার্কেটিং এর ডিমান্ড ছিল। আর একারনেই দেশের ভিতরে এবং বাইরে নতুন নতুন জব অপরচুনিটি তৈরি হচ্ছে। ফ্রীল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসেও ডিজিটাল মার্কেটিং রিলেটেড অনেক কাজ পাওয়া যায়। এর সাথে প্যাসিভ ইনকাম জেনারেট করার সুযোগতো আছেই।
ডিজিটাল মার্কেটিং আসলে কি?
খুব সহজ ভাবে যদি বলি তাহলে এভাবে বলতে হয়, ডিজিটাল চ্যানেল গুলো ব্যাবহার করে পন্যের প্রমোশনই হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। আমি যত সহজ করে বুঝানোর চেষ্টা করলাম, এর ব্যাপ্তি আসলে তারচাইতে অনেক বড়। ডিজিটাল চ্যানেল গুলোর লিস্ট কিন্তু অনেক বড়? এখানে আছে সার্চ ইঞ্জিন, সোশ্যাল মিডীয়া সহ নানা রকমের টুল। এই প্রতিটা অংশকে নিয়েই আসলে ডিজিটাল মার্কেটিং এর আলাদা আলাদা অংশ আছে। যেমন গুগল সার্চ ইঞ্জিনের অরগানিক র্যাঙ্কিং এর জন্য আছে এসইও। আছে ফেসবুক মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং সহ আছে আরো অনেক কিছু। আছে ইনবাউন্ড মার্কেটিং এবং আউটবাউন্ড মার্কেটিং।
মুল কথা হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং আসলে অনেক বড় একটি সেক্টর। বেশির ভাগ ডিজিটাল মার্কেটার আসলে নির্দিষ্ট কোন একটি অথবা দুইটি অংশে অনেক বেশি দক্ষ হয়ে থাকে। যেমন ধরেন কেউ হয়ত এসইও তে ভাল, আবার কেউ হয়ত সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং। কেউ হয়ত ইমেইল মার্কেটিং। কেউ হয়ত সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং ইত্যাদি।
ডিজিটাল মার্কেটার হতে হলে মুলত কোন ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হয়?
ডিজিটাল মার্কেটিং যেহেতু অনেক বড় একটা সেক্টর তাই এটার এক এক অংশের জন্য এক এক রকম দক্ষতার প্রয়োজন হয়। তবে এর মধ্যে কিছু যায়গা আছে যেখানে আপনার অবশ্যই দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এই বেসিক যায়গাটাতে যদি দুর্বলতা থাকে তাহলে আপনি কখনই ভাল ডিজিটাল মার্কেটার হতে পারবেন না। এই পোস্টে আমি মুলত আপনাদেরকে এই যায়গাটাতেই গাইডলাইন দেয়ার চেষ্টা করবো।
১) রিসার্চ
যে কোন মার্কেটিং এর মুল যায়গা হচ্ছে রিসার্চ। কাস্টমার কি চাচ্ছে, তাদের সাইকোলজি, তাদের ভৌগলিক অবস্থা, তাদের ধার্মিক চিন্তা ভাবনা, তাদের সংস্কৃতি ইত্যাদি। এছাড়াও তাদের বয়স, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা এই যায়গা গুলোতেও আমাদের পর্যাপ্ত ধারনা থাকার দরকার পরবে। আপনি যত ভাল রিসার্চ করতে পারবেন, আপনি তত ভাল মার্কেটার হতে পারবেন। আপনার প্রতিটা স্ট্র্যাটেজির ডেভেলপ করার পুর্বে আপনাকে রিসার্চ করতে হবে। শুধু তাই নয়, আপনাকে দেখতে হবে আপনার কম্পিটিটর একচুয়েলি কি করছে? কিভাবে করছে? পসিবল ফিডব্যাক কেমন আসছে?
তাই ডিজিটাল মার্কেটার হতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই রিসার্চ করার স্কীল ডেভেলপ করতে হবে।
২) ট্যুল এর ব্যাবহার
ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রতিটা ক্ষেত্রেই আপনার টুল দরকার হবে। ওয়েবের মজার বেপার গুলাই হচ্ছে এই টুল। টুল গুলো আপনার পুরো প্রসেসটা সহজ করে দিবে। ডাটা ট্রাকিং হতে রিপোর্টিং, অরগানাইজিং হতে ফিল্টারিং সব কিছুই করা যায় টুল দিয়ে। আপনার শুধু জানতে হবে কোন টুলটা ভাল এবং কিভাবে কাজ করে। কিভাবে টুল গুলো থেকে পর্যাপ্ত রিটার্ন জেনারেট করা যায়। তাই ডিজিটাল মার্কেটার হতে হলে আপনাকে অবশ্যই নতুন নতুন টুল ব্যাবহার করার মেন্টালিটি তৈরি করতে হবে।
আপনার প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে এই একটি ছোট এবং ফ্রী টূল কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারে তার জন্য এই ভিডীওটি দেখতে পারেন।
এছাড়াও মার্কেটিং অটমেশনের জন্য আপনি হাবস্পট, মেইলচিম্প, বাফার এপ ব্যাবহার করতে পারেন।
টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য আসানা অথবা ট্রেলো ব্যাবহার করতে পারেন।
ওয়েব রিসার্চ করার সময়ও কিন্তু আপনার বিভিন্ন টুল এর দরকার পরবে।
৩) প্রেসেন্টেশন
ডিজিটাল মার্কেটারকে প্রতিনিয়ত অনেক কিছু প্রেসেন্ট করতে হয়, নানা ভাবে প্রেসেন্ট করতে হয়। বিটুবি তে একরকম প্রেসেন্টেশন আবার বিটুসি তে আরেক রকম। ওয়েব কন্টেন্ট হতে শুরু করে ইমেইল, এড কপি, সব যায়গাতেই কিছুটা ক্রিয়েটিভিটি শো করতে হয়। কাস্টমারের সাইকোলজি, ডিজিটাল চ্যানেলের এলগরিদম এবং টুলের সিমাবদ্ধতা সহ সবকিছু মাথায় রেখে প্রেসেন্টেশন তৈরি করতে হয়। পন্য অথবা সার্ভিসকে প্রেসেন্ট করতে হয়। তাই একজন ডিজিটাল মার্কেটারের অবশ্যই প্রেসেন্টেশন স্কীল ডেভেলপ করতে হয়।
প্রেসেন্টেশন স্কীল ডেভেলপ করার জন্য আপনি ওয়েব থেকে বিভিন্ন টেমপ্লেট নামিয়ে দেখতে পারেন।, ইউটিউবেও অনেক ভিডীও পাবেন।
প্রেসেন্টেশন টুল নিয়ে ভেবে থাকলে প্রেজি চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
৪) কন্টেন্ট ক্রিয়েশন
ডিজিটাল মার্কেটিং আসলে কন্টেন্টের খেলা। সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে সঠিক মানুষের কাছে কন্টেন্ট পৌছে দেয়া। এখন কন্টেন্ট অনেক রকম হতে পারে। টেক্সট, ইমেইজ, ভিডীও। আবার প্রমোশনাল, ইমোশনাল, এডুকেটিভ ইত্যাদি। তাই একজন ডিজেটাল মার্কেটার হতে গেলে কন্টেন্ট তৈরির যায়গাগুলো, ক্ষেত্র গুলো জানতে হবে। তৈরি করা জানতে হবে। হয়ত প্রফেশনাল কপি রাইটার আপনাকে সাহায্য করবে, কিন্তু আপনার তা যাচাই করার দক্ষতা তৈরি করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কন্টেন্ট তৈরির সাত সতের – পর্ব ১
আরো পড়ুনঃ কন্টেন্ট তৈরির সাত সতের – পর্ব ২
কন্টেন্ট তৈরির দক্ষতা অর্জনের জন্য অনেক বেশি কন্টেন্ট দেখতে হবে, পড়তে হবে। তারপর সেখান থেকে আইডিয়া নিয়ে কন্টেন্ট তৈরি করার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়াও হ্যামিংওয়ে এপ এর মত কিছু টুল আছে যা আপনার প্রসেসকে সহজ করে দিবে।
৫) সেলিং স্কীল
যদিও মার্কেটিংএ আপনাকে সরাসরি সেলিং এর সাথে কানেক্টেড থাকতে হচ্ছে না, কিন্তু আপনার টিম থেকে পর্যাপ্ত রিটার্ন জেনারেট করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সেলিং স্কীল ডেভেলপ করতে হবে। কিভাবে নেগোশিয়েট করতে হয় তার দক্ষতা তৈরি করতে হবে। কিভাবে কনভিন্স করতে হয় সেই দক্ষতা তৈরি কতে হবে। এটা হয়ত একদিনেই অর্জন করা সম্ভব নয়, তবে একদিন পরে শুরু করা মানে, একদিন পিছিয়ে যাওয়া। পর্যাপ্ত সেলিং স্কীল না থাককে কন্টেন্ট তৈরিতেও অনেক সময় কষ্ট করতে হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে মার্কেটিং এর মুল কাজ হচ্ছে সেলস প্রসেসটা সহজ করা, কনভার্ট যাতে হয় সেটা মাথায় রেখেই মার্কেটিং প্লান তৈরি করতে হয়, তাই সেলস রিলেটেড পর্যাপ্ত দক্ষতা না থাকলে অনেক সময় পর্যাপ্ত রিটার্ন জেনারেট করতে একটু সমস্যা হয়ে যায়।
তাই আপনারা যারা ডিজিটাল মার্কেটার হতে চাচ্ছেন তাদের অবশ্যই এই যায়গাগুলোতে ফোকাস করা উচিত। এই যায়গা গুলোতে দক্ষতা তৈরি করতে হবে।