দেখতে দেখতে নতুন বছর চলে আসলো, এই বছরের প্রাপ্তি এক এক জনের কাছে এক এক রকম হবে, কারো সব গোল এচিভ হয়েছে। কারো হয়ত লক্ষ্য মাত্রার চাইতে বেশি এচিভ হয়েছে, কারো হয়ত কম। কারো অনেক কম। কারো হয়ত কোন লক্ষ্যই ছিল না।
যাই হোক, এভাবেই আমাদের বছর আসে, আবার বছর চলে যায়। প্রতি বছরের শুরুতেই আমরা অনেক প্ল্যান করি, ভাবি এই বছরটা ডিফারেন্ট হবে। এবার সব ভুল গুলো থেকে যা শিখেছি, তা কাজে লাগাবো, কিন্তু বেশির ভাগ সময় বছর শেষে দেখা যায়, আগের বছরের মতই একই ভুল করেছি, অনেক গোল এচিভ হয়নি। আপনি হয়ত ভাবছেন, আমার ক্ষেত্রেই এমন হয়েছে, বাকিরা ঠিকই এগিয়ে গিয়েছে, কিন্তু বেপারটা পুরাপুরি সত্য নয়। আপনি একটু খোজ নিলে দেখবেন, বাকিদের অবস্থাটাও অনেকটা আপনার মতই। এতে অবশ্য খুশি হবার কিছু নেই, তবে ফ্র্যাস্ট্রেশনের মাত্রা কমাতে পারেন। ভাবতে পারেন আপনি বেশি পিছিয়ে পরেন নি। যদিও আমি অন্যের সাথে তুলনা করার বিপক্ষে।
কিভাবে তুলনা করা উচিৎ তার উপর আমার এই পোস্টটি পড়তে পারেন।
আমরা বেশির ভাগ সময় মনে করি, যা কিছু খারাপ তা শুধু আমার সাথেই ঘটে। কিন্তু একই রকম ঘটনা আরো অনেকের সাথেই ঘটে। পার্থক্য তৈরি করে কে কিভাবে রিয়েক্ট করছে তার উপর।
যাই হোক আমার এই পোস্ট লিখার মুল উদ্যেশ্য হচ্ছে সিস্টেমেটিক ওয়েতে গোল টাকে ডিসাইড করা। এটা আপনাদেরকে হয়ত সয়াহতা করবে, একই ভাবে আমাকেও সাহায্য করবে নিজের গোলটাকে গুছিয়ে নিতে।
লক্ষ্য নির্ধারন করা কেন প্রয়োজনঃ
হারভার্ড বিজনেস স্টাডির একটি ডাটা শেয়ার করছি,
- ৮৩ ভাগ মানুষের কোন গোল নেই
- ১৪ ভাগ মানুষের গোল আছে, কিন্তু কোন প্লান তৈরি নেই, এবং কোথাও লিখাও নেই
- ৩ ভাগ মানুষ তার গোল লিখে রাখে।
স্টাডি থেকে দেখা গিয়েছে, যেই ১৪% মানুষের গোল আছে তারা বাকি ৮৩ ভাগ মানুষের চাইতে ১০ গুন বেশি সফলতা অর্জন করে থাকে। আবার যেই ৩ ভাগ মানুষ তাদের গোল লিখে রাখে, তারা এই ১৪ ভাগ মানুষ যাদের গোল আছে, কিন্তু লিখে রাখেনা, তাদের চাইতে ৩ গুন বেশি সফল।
লিখে রাখলে এটা আমাদেরকে প্লান তৈরি করতে সহায়তা করে, আমাদেরকে রিমাইন্ডার দেয়, এবং আমরা ট্র্যাক থেকে ছিটকে পরলেও দ্রুত ব্যাক করতে পারি।
গোল এবং স্মার্ট গোল এর মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে, তা নিচে আলোচনা করছি।
স্মার্ট গোল কী?
S = স্পেসিফিক
M = মেসারেবল
A = এচিভএবল
R = রিলেভেন্ট
T = টাইমলি
আমাদের লক্ষ্যটি স্পেসিফিক হতে হবে, এমন হতে হবে যাতে আমরা তা পরিমাপ করতে পারি, অন্যথায় আমরা কতটুক এচিভ করতে পারছি তা বুঝতে পারবো না। এমন গোল হতে হবে, যা এচিভ করার মত। যেমন আমি যদি এখন বলি এক বছরে আমার প্রতিষ্ঠান আমাজনের চাইতেও বেশি গ্রো করবে, এটা আমার জন্য এই মুহুর্তে এচিভএবল নয়। এটি রিলেভেন্ট হতে হবে, এবং একটি ডেডলাইন/টাইম ফ্রেম থাকতে হবে।
যেমন ধরেন, ২০২০ সালের ডিসেমবরের ৩১ তারিখের মধ্যে আমি আমাজন প্রজেক্ট থেকে এই এমাউন্টের রেভিনিউ জেনারেট করতে চাই। তাহলে আমার জন্য সহজ এটাকে মেসার করা, একশন প্লান তৈরি করা এবং সামনে এগিয়ে চলা।
এখন যদি আমার লক্ষ্য এমন হত, আগামি বছরে আমি অনেক ভাল ডিজিটাল মার্কেটার হতে চাই, তাহলে আমি এটাকে কিভাবে মেজার করবো? কিভাবে বুঝবো আমি ভাল ডিজিটাল মার্কেটার হয়েছি কিনা? তাই আমাদের সব সময় স্মার্ট গোল সেট করতে হবে, যাতে আমরা পরিমাপ করতে পারি।
এবার আসুন আমরা স্মার্ট গোল সেট করিঃ
১) শেষ থেকে শুরু করাঃ
প্রথমেই আপনি নিজেকে/নিজের প্রতিষ্ঠানকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কোথায় দেখতে চান, তা ডিসাইড করুন।
কিভাবে ডিসাইড করবেন?
যদি আপনি নতুন প্রফেশনাল না হয়ে থাকেন, তাহলে ইতি মধ্যেই আপনার ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে আইডিয়া আছে। আপনি মার্কেট গ্যাপ গুলো জানেন, আপনার দক্ষতা সম্পর্কেও আপনার আইডিয়া আছে। এই সব গুলো বিষয় মাথায় রেখে আপনি ডিসাইড করতে পারেন।
আবার এই বছরের পার্ফরমেন্স আপনাকে এক ধরনের ডাটা দিবে, কতটুকু এচিভ করা সম্ভব। কিন্তু এ বছরের ডাটার উপর বেশি নির্ভর করার দরকার নেই। কেননা এতে গোলটি ছোট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের সবসময় একটু বড় গোল সেট করা উচিৎ। যা অর্জন করা সাধারন হিসেব নিকেশে সহজ নয়। এটা এচিভ করতে হলে আউট অফ দ্যি বক্স চিন্তা এবং কাজ করতে হবে।
২) গোলটিকে ৪ টি কোয়ার্টারে ভাগ করাঃ
এবার আপনার ২০২০ সালের মুল যে গোল, তাকে ৪ টি কোয়ার্টারে ভাগ করুন। সমান ভাবেই ভাগ করতে হবে তা নয়। কেননা প্রতিটা বিজনেসেই কিছু সিজন থাকে। আবার শুরুতে রিটার্ন কম থাকবে। তাই এই অংশ গুলোকে ভেবে আপনাকে ডিসাইড করতে হবে। উদাহরন স্বরূপ, ই-কমার্সের ক্ষেত্রে আপনার শেষ কোয়ার্টারে বেশি রেভিনিউ জেনারেট করবে। বাংলাদেশের মার্কেটে ঈদের সময় গুলোতে। তাই পুরো গোল টাকে ৪ ভাগে ভাগ করলেও এটি মাথায় রাখতে হবে।
৩) গোলটাকে এচিভ করার প্লান তৈরি করে ফেলুনঃ
এবার এই প্রুও প্রসেস যেটা আপনার মাথারা মধ্যে আছে, তা মাথা থেকে বের করুন। কোথাও লিখে ফেলুন। এটা কাগজ কলম হতে পারে, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টুল হতে পারে।
প্রজেক্ট্ মেনেজমেন্ট ট্যুল এর জন্য বেস্ট হচ্ছে আসানা।
আবার যদি ম্যাপ আকারে ব্রেইন স্টোর্ম করতে চান, তাহলে মাইনড মিস্টার।
৪) প্রতি কোয়ার্টারের জন্য একশন প্লান রেডি করুনঃ
এবার প্রতি কোয়ার্টারের শুরুতে আপনি সেই কোয়ার্টারের একশন প্লান রেডি করে ফেলুন। এটাকে মাস এবং সাপ্তাহিক হিসেবে রেডি করুন। আপনার চোখের সামনে আসলে পুরো প্রসেসটা থাকতে হবে, কোন মাসে কতটুকু এচিভ করতে চাই, এবং সেই অনুযায়ি কাজ করে যেতে হবে।
বছরের যে কোন সময় যে কোন কারনে পরিকল্পনা মোডিফাই করা লাগতে পারে, তাই যেটা আমরা তৈরি করেছি, তা ইনিশিয়াল পরিকল্পনা। নাম্বার যেটা সেট করেছি, সেটা ফিক্সড। এই নাম্বার আমাদেরকে বলবে আমরা কতটুকু এচিভ করতে পেরেছি। এটা কম হতে পারে আবার ওভার এচিভড হতে পারে।
এবার আপনার হাতে পুরো প্লানটা আছে, শুধু কাজে নেমে পরতে হবে। যদি কোন কনফিউশন থাকে তাহলে এখানে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। কনফিউশন না থাকলে শেয়ার করতে পারেন।
আমার ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে এখানে ক্লিক করুন।