২০০+ বছরের পুরানো শহড়ে দুই দিনের ট্রিপে যাচ্ছি। উইকিপিডিয়া অনুসারে এটি ১৬৯০ সালের শহর। আমি যাত্রা শুরু করেছি ব্যাঙ্গালোর থেকে। কলকাতাতে দুই দিন থাকবো এবং তারপর কলকাতা থেকে ঢাকা। সকাল ১১ টায় ফ্লাইট। রাতেই সব লাগেজ গুছিয়ে রাখা। সকালে ব্রেকফাস্ট করে হোটেলের ফর্মালিটি সম্পন্ন করে উবার কল করলাম। আমার হোটেল যেহেতু শহড় থেকে একটু বাইরে, তাই খুব একটা সময় লাগবে না এয়ারপোর্টে যেতে। ৪০ মিনিটের মত লাগবে। বেঙ্গালুরু এয়ারপোর্ট এখন পরিচিত। এয়ারপোর্ট ফর্মালিটি সম্পন্ন করে একটু হাটাহাটি করলাম। এমন সময় ইমেইল পেলাম ফ্লাইট ১ ঘন্টা ডিলে। তারমানে কোলকাতাতে এক ঘন্টা সময় কম পাওয়া যাবে 🙁
কিছু করার নেই, আই কান্ট চেঞ্জ ইট কন্সেপ্ট মনে পরে গেল। মোবাইল আছে, ইন্টারনেট আছে, কিছু কাজ করা যায়। আবার এয়ারপোর্টেও একটু হাটাহাটি করা যায়, ছবি তোলা যায়। আবার কলকাতাগামি যাত্রিদের সাথে কথা বলা যায়। সবাই বাংলায় কথা বলছে, ভালই লাগছে শুনতে। দেশের বাইরে গেলে বাংলা ভাষার কাউকে দেখলে একটা অন্য রকম ভাল লাগা কাজ করে।
সময় কাটানোর আরো একটি ভাল সুযোগ হচ্ছে কিছু খাওয়া দাওয়া করা, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে একটু আগেই নাস্তা খেয়ে আসলাম, প্লেনেও আবার খাবার দিবে। তাই খাবারের চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে পাশের সিটের আংকেল এবং আন্টির সাথে কথা বললাম। উনারাও কলকাতা যাবেন।
একটু পরে সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে গেল, আমি বরাবরের মতই রিল্যাক্স মুডে বসে আছি, সবার পরে উঠবো প্লেনে। আর যেহেতু আমার ছোট একটি ব্যাকপেক, ওটা সামনের সিটের নিচেই রেখে দেয়া যায় বলে টেনশন কম।
মজার বেপার হচ্ছে, এই মোবাইল ডিভাইসটার জন্য এখন একার জার্নি গুলাও মানুষের কাছে খুব একটা বোরিং লাগে না, কেউ হয়ত গেম খেলছে, কেউ ফেসবুক, কেউ হয়ত নেটফ্লিক্স। নেটফ্লিক্স বলতেই আমার মনে পরে গেল, ব্যাঙ্গালুরু এয়ারপোর্টেও নেটফ্লিক্স এর বিজ্ঞাপন চোখে পড়েছে।
গত বার যখন ব্যাঙ্গালুরে এসেছিলাম তখন ছিল সন্ধ্যা। গিয়েছিলাম রাতে। এবার এসেছি রাতে, কিন্তু এই প্রথম সকালে যাচ্ছি। তাই রৌদ্রজ্যল এয়ারপোর্টটি দেখতে ভালই লাগছে, সাড়ি সাড়ি বিমান দাঁড়িয়ে আছে, দূর থেকে মনে হয় অনেক গুলো খেলনা বিমান।
বিমান চলছে, বরাবরের মতই অসাধারন আকাশ, এক আকাশের যে কত রকমের রুপ, তা আকাশে না উড়লে বিশ্বাস করা সম্ভব না, এক একটি মেঘ এক এক রকম। মাঝে মাঝে মেঘ গুলোকে হাওয়াই মিঠাই এর মত লাগে। বিমান ছুটে চলেছে, আর আমি জানালা দিয়ে হাওয়াই মিঠাই দেখছি। দেখতে দেখতে দুই ঘন্টার জার্নি শেষ। পৌছে গেছি কলকাতা।
কলকাতা পৌছেই চেষ্টা করছি যত দ্রুত বের হওয়া যায়, কেননা এটা আমার প্রথম কলকাতা ভ্রমন। মাত্র দুই দিন থাকবো, তাই প্রতিটা মুহুর্তকে ইউটিলাইজ করতে চাচ্ছি। এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই চোখে পড়লো মমতা ব্যানার্জির বড় বড় সাইনবোর্ড, যেখানে উনি টুরিজমকে প্রমোট করছেন।
এয়ারপোর্ট থেকে বের হলাম, উবার কল করলাম। আমার হোটেল হচ্ছে পার্ক স্ট্রিট এলাকাতে, আমি আগে থেকেই বুকিং ডট কমের মাধ্যমে বুকিং করে রেখেছিলাম। এয়ারপোর্ট থেকে পার্ক স্ট্রিটের ভাড়া ছিল প্রায় ৬০০ রুপির কাছাকাছি। উবারে করে যাচ্ছি, এবং শহর দেখছি। দুপুর বেলা, কর্ম দিবষ। রাস্তা খুব বেশি ফাকা নয়, আবার অনেক বেশি জ্যাম এমনো নয়। গাড়ি ছুটে চলেছে তার আপন গতিতে, আমি জানালা দিয়ে বাইরে দেখছি। ব্যাঙ্গালুরু এবং কলকাতার মধ্যে ভাল পার্থক্য আছে। বিশেষ করে পুরানো বাস গুলো দেখলে একটু অন্য রকম লাগে। আর অনেক পুরানো বিল্ডীংও দেখা যাচ্ছে। গাড়ি ফ্লাই ওভারে উঠেছে, চলছে আর চলছে, বিশাল ফ্লাই ওভার, রাস্তার এক পাশে একটু ডেভেলপড (সম্ভবত এই এলাকার নাম সল্ট লেক), আরেকপাশে কিছুটা পুরানো ধাচ। দূরে একটি বিল্ডিং দেখতে পেলাম, মনে হল সিঙ্গাপুরের ম্যারিনা বে স্যান্ড এর মত করে কিছু একটা করতে চাচ্ছে, সম্ভবত জাহাজ টাইপের কিছু একটা মনে হল।
এভাবেই গাড়ি চলতে থাকলো, নতুন কলকাতা, পুরানো কলকাতা সব কিছুই মনে হচ্ছে চলতে চলতে দেখা যাচ্ছে। অনেক গুলো চেইন হোটেল আছে ওদের। যেমন OYO, Treebo, এবং মুলত এইগুলো বাজেট হোটেল চেইন। খুব কম দাম হতে শুরু করে মাঝারি বাজেটের মধ্যে থাকার জন্য এইগুলো ভাল চেইন।
প্রায় দেড় ঘন্টার মত লাগলো আমার হোটেলে পৌছাতে। কিছুটা ক্ষুধা লেগেছে, আবার কিছু ইমেইলের রিপ্লাই দিতে হবে, হোটেল ফর্মালিটি সম্পন্ন করে রুমে গেলাম, একটু গা এলিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে, আবার মনে হচ্ছে খুব ছোট ট্রিপ, তাই বের হয়ে যাওয়া উচিত। ইতিমধ্যেই রোদ কমতে শুরু করেছে, তারমানে বিকেল শুরু হয়েছে। ওয়াইফাই কানেক্ট করে মেইল গুলোর রিপ্লাই দিলাম। একটু ফ্রেশ হলাম। কোথাও যাব ভাবছি। আমার হোটেলের ঠিক উল্টা পাশেই একটি শপিং মল, নাম হচ্ছে মেট্রো। এই নামে সম্ভবত একটি হিন্দি সিনেমাও আছে, দেখা হয়নি যদিও।
চলবে…