আমাদের সফলতার অনেকটাই নির্ভর করে আমাদের আত্মবিশ্বাসের উপর। আমাদের চিন্তা, বিশ্বাস, বডি মুভমেন্ট এই প্রতিটা অংশ আমাদের সফলতার সাথে অতুপ্রত ভাবে জড়িত। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগেন। আমি নিশ্চিত, এই পোস্টের শেয়ার করা বিষয় গুলোকে যদি আপনি মেনে চলেন তাহলে আপনার আত্মবিশ্বাস অনেকে বেড়ে যাবে।
আত্মবিশ্বাস কি?
খুব সহজ ভাবে বললে বলতে হচ্ছে নিজের প্রতি আপনার যেই বিশ্বাস সেটাকেই আত্নবিশ্বাস বলা যেতে পারে। আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের প্রফেশনাল এবং পারিবারিক যায়গাতে এমন কিছু কাজ করি যা আমি হয়ত প্রথম বার করছি। অথবা প্রথমবার না হলেও কোন একটা ভিন্নতা আছে, অথবা সচরাচর এমনটা হয়ত করা হয় না। সেই কাজ গুলোর ক্ষেত্রে আমরা অনেক সময় কনফিউজ থাকি, আমি কি পারবো? সময় মত শেষ করতে পারবো? ঠিক ভাবে করতে পারবো? এই সিচুয়েশন গুলোতে কিছু মানুষের ভিতরে একটা পসিটিভি ফিলিং থাকে, সে ধরে নেয়, সমস্যা নেই, আমি পারবো। আবার কিছু মানুষ নেগেটিভ ওয়েতে চিন্তা করে। সে ধরে নেয়, আমি এটা পারবো না।
যারা পসিটিভলি নিচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে তাদের আত্নবিশবাস আছে, আর যারা নেগেটিভলি ভাবছে তাদের আত্নবিশবাস কম।
এখন একটু ভেবে দেখুন, আপনি নিজেই যদি বিশ্বাস না করেন যে আপনি পারবেন তাহলে অন্য কে কি করে বুঝাবেন যে আপনি পারবেন। আপনি যা করতে চান তা আপনাকেই করতে হবে। মাঝপথে যাদের সাহায্য এবং দিক নির্দেশনা পেলেন তাকে ধরতে হবে প্রত্যাশার বাইরে থেকে পাওয়া কোন উপহার। আপনি যদি অনলাইনে উপার্যন এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে থাকেন তাহলে আপনি হয়ত বুঝে গেছেন এখানে সুযোগ যেমন অনেক, ঠিক একি ভাবে এখানে প্রতিযোগিতাটাও অনেক বেশি। এটা এমন একটা যায়গা যেখানে সার্টিফিকেট এর মাধ্যমে নিজেকে প্রমান করার অথবা টিকে থাকার কোন সুযোগ নেই। আপনাকে টিকে থাকতে হলে আপনাকে কাজ দিয়ে প্রমান করতে হবে যে আমি এটা পারি এবং আমি এটা পারব। আর প্রমান করার সুযগ পাওয়া এবং সুযগ সৃষ্টি করার মদ্ধ্যে যেই সমস্যাটার মুখমুখি মানুষ সবচাইতে বেশি পরে তা হচ্ছে আত্মবিশ্বাস এর অভাব। তো আপনি যদি আত্মবিশ্বাস এর অভাবে ভুগতে থাকেন তাহলে অনেক সহজ গন্তব্যটাকেও আপনি অনেক কঠিন বানিয়ে ফেলবেন। আমি আমার নিজের অভিগ্যতা থেকে কিছু সহজ এবং কার্যকরি উপায় নিচে উল্ল্যেখ করছি হয়ত আপনাদের কাজে আসতে পারে।
বার বার চেষ্টা করা
সেই ছোট বেলার কথা চিন্তা করেন। আপনি সব শব্দ উচ্চারন করতে পারতেন না। লাল কে হয়ত নান বলতেন। কিন্তু বলতে বলতে এবং শুনতে শুনতে আপনি কিন্তু বড় হবার সাথে সাথে এই জিনিশ গুলোও শিখে গেছেন। এখন কিন্তু আর লাল কে নান বলেন না। আবার একই ভাবে প্রথম যখন অ, আ লিখা শিখছিলেন। পারছিলেন না, পারছিলেন না। কিন্তু বাবা, মা হাল ছাড়ে নি। যার ফলস্রুতিতে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি।
আমাদের প্রফেশনাল এবং একাডেমিক, এমনকি সব লাইফেই ফর্মুলাটা একই রকম। বেশির ভাগ নতুন কাজ শিখতে আমাদের সময় লাগবে। পারফেকশন নিয়ে ভাবার দরকার নেই। শুরু করা দরকার। রিপিটেড ট্রাই করা দরকার। বার বার চেষ্টা করে যান। প্রতিটা চেষ্টা আপনাকে আগের বারের চাইতে একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সফল দের কে অনুসরন করুন
আপনি যে ক্ষেত্রে কাজ করছেন সেই ক্ষেত্রে হয়ত আগে কেউ সফল ভাবে কাজ করে গেছে। অথবা করছে। ক্ষেত্র সম্পুর্ন নতুন হলে তার আসে পাসে কেউ অনেকটা একিরকম কোন প্রকল্পে কাজ করছে। আমরা সর্বদা যে ভুল টা করি তা হচ্ছে তার গতিবিধি, কর্ম্পদ্ধতি থেকে কিছু শেখার চেষ্টা না করে তাকে হিংসে করা শুরু করি আর পিছিয়ে পরি। অথচ আমরা চাইলে খুব অনায়াসেই তার সফলতাকে আমাদের অনুপ্রেরনাতে রুপান্তরিত করতে পারি। তার পথ অনুসরন করতে পারি। অথবা আমাদের পথের অনেক আগাম সমস্যা এবং তার সমাধান সম্পর্কে সচেতন থেকে প্লান তৈরি করে রাখতে পারি। কিভাবে তুলনা করার বাজে স্বভাব কে নিজের কেরিয়ার ডেভেলপমেন্টের জন্য ব্যাবহার করবেন তা জানতে এই পোস্টটি পড়ে দেখতে পারেন।
নিজে নিজে কথা বলা
সতর্কতাঃ একা একা অথবা নিজে নিজে কথা বলার কারনে কেউ যদি আপনাকে পাগল ভাবে তাহলে আমি দায়ি নই।
আপনাদের যদি হিন্দি গান শুনার অভ্যাস থেকে থাকে তাহলে হয়ত মনে থাকবে একটা সময় হিমেশ রেশামিয়া এর গান অনেক বাজত আনাচে কানেচে শপিং মল সব যায়গাতে। আমি অনেকের মধ্যে একজন ছিলাম যে কিনা হিমেশের গান পছন্দ করতাম না। কিন্তু আমি নিজের অজান্তে অনেক বার হিমেশের গান গেয়েছি। হঠাত করে আবিস্কার করেছি যে আমি ওনার গান গাচ্ছি। বেপার টা আসলে ঘটেছে ওর গান না চাইলেও কানের আশে পাশে বাজতে থাকতো। তাই নিজের অবচেতন মনেই আমি তা গেয়ে ফেলতাম।
যাই হোক মুল কথায় আসি। আপনি যদি আপনার অবসর সময়ে নিজে নিজে কথা বলেন যে আপনার লক্ষ কী? তাহলে আপনার মগজের মধ্যে তা স্টাবলিশড হয়ে যাবে। যা সাবকনসাস মাইন্ড থেকেও আপনাকে অনুপ্রানিত করবে। আপনাকে একশন নিতে উৎসাহী করবে। আপনার কনফিডেন্স লেভেল বাড়বে। আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনার কেরিয়ার ডেভেলপমেন্টের রেস্পনসিবিলিটি শুধুই আপনার, তা অন্য কারো না।
লক্ষ্যটাকে ছোট ছোট করে ভাগ করুন
ধরুন আপনি সিড়ি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এর ত্রিশ তলাতে উঠবেন। যখন পাঁচ তলাতে উঠলেন, আপনি তখন কিছুটা ক্লান্ত। যখন দশ তলাতে উঠলেন তখন আপনি যতটা না ক্লান্ত তার চাইতে বেশি ভেঙ্গে যাবে আপনার মনোবল যখন মনে হবে আরো বিশ তলা বাকি 🙁 । কিন্তু আপনি যদি আপনার সেই একি পথ একি কষ্ট, কিন্তু ভাবনা অথবা দৃষ্টি ভংগিটাকে পালটিয়ে ফেলেন। একবারে ত্রিশ তলা হিসেব না করে ১০ তলা করে তিন বার ভাবুন। তখন ১০ তলাতে উঠার পর আপনার মনে হবে তিন ভাগের এক ভাগ শেষ করে ফেলেছি আর মাত্র ২ভাগ। পেরে যাব। গানিতিক ভাবে ঘটনা সমান হলেও মনস্তাত্তিক ভাবে আপনার আত্মবিশ্বাস বেরে যাবে।
ঠিক একি ভাবে, প্রফেশনাল সেক্টরটাকেও ভাগ করে নিন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে। তখন কি পারিনি তার চাইতে বেশি মনে হবে কতটুকু পেরেছি। এই সম্পর্কে আরো ডিটেইল গাইডলাইন পেতে এই পোস্টটি পড়তে পারেন শুরু করার রোডম্যাপ আঁকবেন যেভাবে।
প্রভাবিত করতে পারে এমন উক্তি পড়ুন
একমাত্র সেই কোন ভুল করে না, যে কিছুই করে না। (বাংলাতে রুপান্তরিত)
এই উক্তিটা পড়ার পর আমার মনে হয় সবার ভিতরে একটাই অনুভুতি আসবে যে ভুল করাটাই স্বাভাবিক। এটার জন্য ভেঙ্গে পড়ার কিছু নেই। এরকম হাজারো আত্মবিশ্বাস নিয়ে উক্তি পাওয়া যাবে যা নিয়মিত পরলে আপনি উপলন্ধি করতে পারবেন, যারা সফল হয়েছে অথবা ছিল তারা সবাই আপনার আমার মত সাধারন মানুষ ছিলেন। আপনার আমার মতই সমস্যা এবং ভুল এর মধ্যে থেকেই তারা এগিয়ে গিয়েছে। তাই আপনি এবং আমিও পারবো এগিয়ে যেতে। কি আত্মবিশ্বাস কি একটু বাড়ছে?
সাক্ষাৎকার
আমি সবসময় সাক্ষাৎকার দেখতে, পড়তে এবং শুনতে পছন্দ করি। এটার মুল কারন হচ্ছে, সাক্ষাৎকার এর মাধ্যমে অনেক লুকায়িত সত্য এবুং দিকনের্দেশনা পাওয়া যায়। আমি এখন ব্লগ পোষ্ট লিখছি, আমি তাই লিখছি যা আমি লিখতে চাচ্ছি। কিন্তু সাক্ষাৎকার এ মানুষ তাই বলে যা উপস্থাপক জানতে চায়। এটা হয়ত সরাসরি কোন দিক নির্দেশনা দেয় না, কিন্তু পরোক্ষ ভাবে অনেক সহায়তা করে।
এছাড়াও বিভিন্ন ইভেন্ট গুলো থেকে আপনি আত্নবিশ্বাস পাবেন। কেননা আমরা যখন দেখি আমাদের মতই কেউ এই কাজ গুলো করতে পেরেছে, তখন মনে হয় আমিও পারবো। যদিও কেউ কেউ আবার অন্যদের সফলতাতে ডিমোটিভেটেডও হয়ে পরে।
আমার আপকামিং ইভেন্টগুলো সম্পর্কে জানতে আমার ইভেন্ট পেইজে চোখ বুলাতে পারেন।
না কে না বলুন
পারবো না, এই কথাটাকে না বলুন। সমস্যা আসবে। প্রতিটা সমস্যা অনেক কষ্ট দিবে। সফলতাটাকে দূরে ঠেলে দিবে। কিন্তু সমস্যাটা আপনাকেই অতিক্রম করতে হবে। বসে থাকলে সমস্যার সমাধান হবে না। আপনার সমস্যা এবং আপনার স্বপ্ন দুইটাই আপনার। তাই না কে না বলতে শিখুন। দেখবেন আত্মবিশ্বাস চলে আসবে অনায়াসে।
শেষ করার আগে একটা ব্যাপার না বললেই নেই, আত্মবিশ্বাস এবং অতিরঞ্জিত আত্মবিশ্বাস (over confidence হিসেবে বুঝাতে চেয়েছ, আমি নিশ্চিত নই এটার সঠিক বাংলা শব্দ কি হবে) এক নয়। তাই অতিরঞ্জিত আত্মবিশ্বাস থেকে দূরে থাকুন।
আপনাদের জন্য নতুন কিছু ভিডিও আসছে, তাই চাইলে আমার ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন। এছাড়াও জয়েন করতে পারেন আমার ফেসবুক গ্রুপে।