৮৫ ভাগ ব্যবসা শুরুর ৫ বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। শুধুমাত্র ১৫ ভাগ ব্যবসা থাকে যারা ১৫ বছরের চাইতেও বেশি সময় মার্কেটে টিকে আছে।
মজার না?
আমরা অনেক জায়গাতেই শুনেছি যে ব্যবসাতে ভাল করতে হলে একটি বিজনেস প্ল্যান তৈরি করা দরকার। আবার যারা বিজনেস ব্যাকগ্রান্ডে পড়ালেখা করেছে, তারা একাডেমিক লাইফে হোম ওয়ার্ক/এসাইনমেন্ট হিসেবে বিজনেস প্ল্যান তৈরি করেছে।
আমাদের বিজনেস লাইফেও আসলে বিজনেস প্ল্যান তৈরি করতে হবে।
এখন আমাদের হাতে দুইটা অপশন আছে। এক একাডেমিক লাইফের মত বড় বিজনেস প্ল্যান তৈরি করা, যা সহজে স্ক্যান করা যায় না। হয়তো আপনি মাসে একবার চোখ বুলাবেন, অথবা কোয়ার্টারে একবার।
অথবা একটি এক পেইজের বিজনেস প্ল্যান তৈরি করবেন যা প্রতিদিন চোখ বুলাবেন এবং যা আপনাকে আপনার কম্ফোর্ট জোন থেকে বেড় হতে সহায়তা করবে। টিম ওয়ার্ক গুলোর প্রোগ্রেস মনিটর করতে সহায়তা করবে। আপনি আপনার প্ল্যান এর সাথে কতটুকু এলাইন্ড আছেন তা দেখতে পারবেন।
এই পোষ্টে আমি দেখাবো কিভাবে একটি এক পেইজের বিজনেস প্ল্যান তৈরি করবেন।
আমরা যখন এক পেইজে একটি বিজনেস প্ল্যান তৈরি করছি তখন কিন্তু বেপারটা এমন নয় যে আমরা বিজনেস গোল ছোট করে ফেলছি। আমার বিজনেস গোল বড়ই থাকছে, আমি শুধু ওটাকে সংক্ষেপে লিখছি। এক পেইজের মধ্যে লিখছি যা সহজেই স্ক্যান করা যায়। এবং দরকারি একশন প্লান তৈরি করে ফেলা যায়।
আমাদের এই এক পৃষ্ঠার বিজনেস প্ল্যান এর মুল অংশ হচ্ছে ছয়টি।
১) ওভারভিউ
ওভারভিউ সেকশনে ব্যবসার গুরুত্বপুর্ন বেসিক বেপার গুলো থাকছে, যেমন এটি মূলত কী ধরনের ব্যবসা, কোথায় অবস্থিত, ব্যবসার মিশন ইত্যাদি।
যেহেতু এক পৃষ্ঠার তাই অকারণে বড় না করে, বুলেট পয়েন্ট অথবা ছোট ছোট লাইনে লিখে ফেলতে হবে। যা দেখলে বুঝা যায় যে কী বোঝানো হয়েছে।
২) ইউনিক সেলিং প্রোপসিশন
এটি একটু গুরুত্ব পুর্ন অংশ। এখানে আমাদের কিছুটা সময় ব্যয় করতে হবে। বেড় করতে হবে কেন মানুষ আমাদের পণ্য অথবা সেবা কিনবে? বাকিদের চাইতে আমরা কোথায় আলাদা। কিভাবে আমরা বাকিদের চাইতে বেশি ভ্যালু এড করছি। এই বেপার গুলা থাকবে এই অংশে। নতুন ব্যবসার ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন গুলার উত্তর পাওয়া কষ্টকর, তারপরেও এই প্রশ্ন গুলার উত্তর খুঁজতে হবে। এবং তারপর তা লিখে ফেলতে হবে এই এক পৃষ্ঠার ব্যবসায়িক প্লানটিতে।
৩) মার্কেটিং এবং সেলস
বিজনেস প্ল্যান এর যে জায়গা গুলতে ঘন ঘন পরিবর্তন হয় এটি তার মধ্যে একটি। মনে রাখতে হবে, একটি সলিড সেলস এবং মার্কেটিং স্ট্রাটেজি না থাকলে আসলে ব্যবসা বড় করা সম্ভব না। তাই আমাদের অবশ্যই সেলস এবং মার্কেটিং স্ট্রাটেজি নিয়ে ভাবতে হবে এবং তা লিখে ফেলতে হবে। এর মুল অংশ গুলো থাকবে অনেকটা এমনঃ
• মার্কেটিং চ্যানেল
• রিসোর্স
• সেলস চ্যানেল
• সেলস রিসোর্স
৪) পণ্য/সেবা
একটি ব্যবসা আসলে একাধিক পণ্য এবং সেবা নিয়ে কাজ করে। ব্যবসার ধরন অনুযায়ী এর সংখ্যা কম বেশি হতে পারে। ব্যবসায়িক প্ল্যান এর এই অংশে আমরা লিখবো আমরা কত গুলো পণ্য অথবা সেবা নিয়ে কাজ করবো। কোন কোন পণ্য এবং সেবা নিয়ে কাজ করবো ইত্যাদি।
যদি এমন হয় আমাদের পণ্য অথবা সেবার সংখ্যা অনেক বেশি সে ক্ষেত্রে ক্যাটাগরি গুলো লিখে রাখা যায় অথবা বিশেষ বিশেষ পণ্য অথবা সেবা লিখে রাখা যায়। সব গুলো হয়তো লিখার দরকার পরবে না।
৫) পণ্য/সেবা তৈরি এবং ডেলিভারি
এই অংশটি খুবই গুরুত্বপুর্ন। এখানে আমাদের লিখতে হবে আমরা কিভাবে আমাদের পণ্য অথবা সেবা তৈরি করবো। এবং কিভাবে তা ডেলিভারি করব। এবং এই প্রসেস এর গুরুত্বপুর্ন অংশ গুলো, যা দেখলেই পুরো প্রসেসটা সম্পর্কে আইডিয়া পাওয়া যাবে।
৬) গোল
এই অংশটি হচ্ছে সবচাইতে গুরুত্বপুর্ন। এবং পরবর্তি সময়ে এই অংশটাই আপনাকে সব চাইতে বেশি ফোকাস রাখতে হবে। এবং এই অংশের উপর ভিত্তি করে আপনার উপড়ের অনেক অংশেই সময়ে পরিবর্তন আনতে হবে।
এই অংশটিতে মূলত থাকবে নাম্বার। যেই নাম্বার আপনাকে আইডিয়া দিবে আপনি কতটুকু এচিভ করতে চান। কত দিনে। যা এনালাইজ করলে বুঝতে পারবেন আপনি কতটুকু এগিয়ে আছেন এবং কতটুকু পিছিয়ে আছেন। এখানে আপনাকে লিখতে হবে আপনি কত জন নতুন কাস্টমার চান। আপনার রেভিনিউ টার্গেট কত। আপনার প্রফিট টার্গেট কত। আপনি কতজন নতুন টিম মেম্বার নিয়োগ দিতে চান। এই টার্গেট কি আপনি ৩ ভাগে ভাগ করতে পারেন।
- ৫ বছরের গোল
- ১ বছরের গোল
- ৩ মাসের গোল
মনে রাখতে হবে, ১ পৃষ্ঠার বিজনেস প্ল্যান আমরা এই কারনে লিখছি যাতে আমরা তা নিয়মিত চোখ বুলাতে পারি। তাই বিজনেস প্ল্যান লিখে ড্রয়ারে রেখে দিলাম, আর দেখলাম না, তাহলে কিন্তু হবে না। আমাদের নিয়মিত চোখ বুলাতে হবে।
আরেকটা বেপারঃ
আপনার পার্সোনাল লাইফকে বাদ দিয়ে আপনি বিজনেস প্ল্যান তৈরি করতে পারবেন না, আপনি না চাইলেও আপনার পার্সোনাল লাইফ আপনার প্রফেশনাল লাইফের সাথে কানেক্টেড থাকবেই, তাই একই ভাবে আপনার একটি পার্সোনাল লাইফের প্ল্যান থাকা উচিত। যা চাইলে আপনি অনেকটা একই ফর্মুলাতে তৈরি করে ফেলতে পারেন। এটা নিয়ে হয়তো ভবিষ্যতে একটি আলাদা কনটেন্ট লিখে ফেলবো।
আমার ফেসবুক গ্রুপে জয়েন না করে থাকলে এখান থেকে করতে পারেন।
আমার ইউটিউব চ্যানেল এ সাবস্ক্রাইব করে ফেলুন এই লিঙ্ক থেকে।