প্রফেশনাল জীবনে আপনার এমন কী করার ইচ্ছে ছিল যা আপনি এখনো করতে পারেন নাই?
অথবা প্রায়ই ভাবেন, আমি সময় পেলে এটা করতাম ওটা করতাম।
আমিও আসলে এমন অনেক কিছুই ভাবি যা এখনো করা হয়ে উঠে নি। আবার এত ব্যাস্ততার মধ্যেও অনেক কিছুই করা হয়েছে। আমি দেখেছি কিছু সহজ স্বভাবের পরিবর্তন করতে পারলে এত ব্যাস্ততার মধ্যেও নতুন কিছু করার সময় বের করা সম্ভব হয়ে যায়। আজ আমি এরকম কিছু স্বভাবের কথাই লিখবো, যা আমাকে অনেক বেশি প্রোডাক্টিভ করে তুলেছে।
আমরা যতই বলি আমরা এক সাথে অনেক কাজ করি, কিন্তু আমাদের মস্তিস্ক একসাথে দুইটা কাজ করতে পারে না। তারমানে আমরা যখন একসাথে একাধিক কাজ করি তখন আমাদের মস্তিস্ক একবার এইদিকে মনযোগ দেয় তো আরেকবার ঐদিকে। আর এই কারনে খুব অল্প সময়েই আমাদের মস্তিস্ক টায়ার্ড ফিল করা শুরু করে। আমাদের প্রোডাক্টিভিট কমতে থাকে।
তাই মাল্টিটাস্কিং যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলতে পারলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। তবে তার জন্য আমাদের কিছু কমন ডিস্ট্রাকটিভ স্বভাব এবং বস্তু আইডেন্টিফাই করতে হবে।
ইমেইল, আমাদের সবচাইতে দরকারি টুল, আবার প্রোডাক্টিভিটি ভ্যাম্পায়ারো বলা চলে
আমরা যারা অনলাইন প্রফেশনাল তারা অনেকেই একটু পর পর ইমেইল চেক করে থাকে। কোন ক্লায়েন্ট কোন মেইল করলো কিনা, নতুন কোন প্রোডাক্ট সেল হল কিনা ইত্যাদি। এই স্বভাব আমাদের মনযোগকে বার বার ডাইভার্ট করে দেয়। শুধু তাই নয়, এটা আমাদের মস্তিস্ককে আরো বেশি টায়ার্ড করেও দেয়। আমার অভিজ্ঞতা থেকে যদি বলি, কোন ইমেইলের রিপ্লাই ১/২ ঘন্টা পর দিলে তেমন কোন সমস্যা হয় না। আবার একটু পর পর ইমেইল চেক করে কোন সেল হল কিনা, তাতেও সেল বাড়ে না। আমি গত সাত বছর ধরে অসংখ্য বিজনেস ইমেইল হ্যান্ডল করে আসছি। আমার ক্ষেত্রে কখনই এমন হয় নাই, যে ক্লায়েন্টের ইমেইলের রিপ্লাই ১/২ ঘন্টা পরে দেয়ার কারনে ক্লায়েন্ট অবজেকশন দিয়েছে অথবা কাজ ফেরত নিয়ে গিয়েছে। যদি কোন ক্লায়েন্ট এই ক্ষেত্রে অবুঝ বাচ্চার মত আচরন করে, আপনি তাকে বুঝিয়ে বলতে পারেন যে বার বার মনযোগ ইমেইলের দিকে দিলে তার প্রজেক্টের কোয়ালিটিও নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে। দেখবেন আর সমস্যা হবে না।
তাহলে ইমেইল কখন চেক করা উচিত?
এই আর্টিকেলটা পড়তে পারেন, এখানে আমি ইমেইল চেকিং হ্যাবিট কেমন হওয়া উচিত তার একটা বিস্তারিত দিক নির্দেশনা দিয়েছি আমার এবং অন্যান্য সফল প্রফেশনালদের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে।
কাজ গুলোকে একটা একটা করে না করে ব্যাচ আকারে করা যেতে পারে
আপনি যদি খেয়াল করেন, দেখবেন, পুরো সপ্তাহে আমরা এমন অনেক কিছুই করি যা ব্যাচ আকারে করা যায়। যেমন সোশ্যাল মিডিয়াতে নলেজ শেয়ার করা। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, রেন্ডমলি মাথায় যা আসেন লিখে ফেলেন ফেসবুকে। আমিও লিখি। আবার কিছু কন্টেন্ট আমি এই জন্য শেয়ার করি যাতে মানুষের উপকার হয়। নলেজ শেয়ারিং বলতে পারেন। আপনারা যারা লেখা লিখি করেন তারা খুব ভাল করেই জানেন লেখা লিখি যখন তখন আসে না। আপনি কিছু লিখতে চাচ্ছেন। মাথায় কিছু আসছে না, কি লিখবেন। এখান থেকে বের হবার সলিউশনটা অবশ্য খুব সহজ। সলিউশনটা হচ্ছে যখন মাথায় লেখা আসছে না, তখনো কিছু না কিছু লেখা শুরু করা। প্রয়োজনে নিজের নাম লেখতে থাকেন, দেখবেন নিজের অজান্তেই লেখার ফ্লো চলে আসছে। এটা কাজ করে, পরিক্ষীত।
যাই হোক, আমি যখন লেখা লিখি করতে যাচ্ছি, আমার ব্রেইন একটা সময় নিচ্ছে। কি লিখেব, কিভাবে লিখবে। লেখা ফ্লো তৈরি করতেও একটা সময় নেয়। লেখা লিখির বাইরে অন্য কাজগুলোর ক্ষেত্রেও বেপারটা অনেকটাক একই রকম। তারমানে যতবার আমি একটা কাজ করতে যাব, আমার ব্রেইন একটা সময় নিবে। কিন্তু আমরা যখন এই ধরনের কাজ গুলো ব্যাচ আকারে করি, তখন প্রতিবার এই সময় গুলো নেয়া লাগে না। শুধু তাই নয়, যেহেতু ব্রেইন একই সাথে একটা বিষয়ের উপরেই ফোকাস করেছে তাই কাজের কোয়ালিটিও ভাল হবে। সময় কম লাগবে। আবার যেহেতু আপনি আগামি কালের কন্টেন্ট আজকেই লিখে রাখলেন, তাই কাল কোন কারনে ব্যাস্ততা বেড়ে গেলেও আপনার কন্টেন্ট রেডি হয়ে থাকলো।
ধরেন আপনি আপনার ফেসবুক পেইজ আপ-টু-ডেট করতে চাচ্ছেন। সেখানেও আপনি ডেইলি না করে ব্যাচ আকারে এক সপ্তাহের কন্টেন্ট আপডেট করে দিতে পারেন। নিচে আমি আমার টাস্ক লিস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করছি।
আবার ধরেন আপনার কোন একটা ব্লগ পোস্ট শেয়ার করবেন ফেসবুকে, আপনি সেটাও ৩/৪ মাসের জন্য স্কিডিউল করে নিতে পারেন। যেমন আমি আমার একটা পোস্ট এটলিস্ট ৩ বার শেয়ার করি, আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা একদিনেই আমি স্কিডিউল করে ফেলি। কখনো কখনো বাফার এপ ব্যাবহার করি, মাঝে মাঝে আসানাতে রেডি করে রাখি।
প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টুল হিসেবে আমি সবসময় আসানাকে সাজেস্ট করি, তাদের ক্যালেন্ডার ভিউটা অনেক প্রোডাক্টিভ।
আরো পড়ুনঃ সেলিং স্কিল কেন ডেভেলপ করবেন?
কাজকে প্রায়টারাইজ করা গুরুত্ব পুর্ন
আমি আরেকটা সমস্যা দেখেছি, আর তা হচ্ছে কাজ কে প্রায়টারাইজ না করা। আমি নিজেও এই সমস্যাতে অনেক বার ভুগেছি, এমনকি মাঝে মাঝে এখনো ভুল করে ফেলি। এই সমস্যার সমাধানের সবচাইতে কার্যকরি উপায় হচ্ছে ABCDE মেথড। এই টপিকের উপর আমার একটা পডকাস্ট আছে। পডকাস্টটি এখানে শুনতে পারেন।
মোবাইলটাকে দূরে রাখাও গুরুত্ব পুর্ন
আমাদের পকেটের মোবাইলটা যেমন আমাদের অনেক সাহায্য করে, তেমনি টাইম নস্ট এবং মনযোগের তেরটা বাজাতে তাহার জুড়ি নেই। তাই যথাসাধ্য মোবাইলটাকে দুড়ে রাখতে পারলে ভাল হয়। কাজে মনযোগ দিতে সুবিধা হয়।
ব্রাউজারের অপ্রয়োজনিও ট্যাব/ টুল চোখের সামনে থেকে যতটুকু দূরে থাকা যায় ততই ভাল। তাই আমাদের উচিত হছে নির্দিষ্ট একটা কাজ সম্পন্ন করতে যেই টুল / ট্যাব গুলো পিসিতে দরকার হতে পারে শুধু তাই চোখের সামনে রাখা। এতে অন্যান্য মেটেরিয়ালগুলো হুট হাট আমাদের মনযোগ নষ্ট করতে পারবে না।
এই প্রতিটা পার্ট আমাকে সাহায্য করেছে। রিয়েল লাইফ উদাহরন যদি দেই, আমি আর্টিকেল লিখা শুরু করার পর থেকে একবারো ফেসবুকে যাইনি, ইমেইল চেক করিনি। যার ফলে আমি খুব অল্প সময়ে এই আর্টিকেলটি লিখে ফেলতে পেরেছি। এবং এই আর্টিকেলের সাথে সাথে এটার সাপোর্টাইং কন্টেন্ট গুলাও লিখে ফেলবো, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য।
এছাড়াও আপনি আপনার টুডু লিস্ট আপডেটের জন্য মোমেন্টাম এপ ব্যাবহার করতে পারেন। মার্কেটিং এবং অনলাইন বিজনেস সম্পর্কিত আরো টিপস পেতে এই গ্রুপে জয়েন করতে পারেন।