আপনি কি পরিস্কার ভাবে বলতে পারবেন আপনি ফেসবুক কেন ব্যাবহার করেন?
প্রফেশনাল দরকারে?
নাকি শুধু মাত্র ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলির সাথে কানেক্টেড থাকার জন্য?
আপনি যে কারনেই ফেসবুক ব্যাবহার করেন না কেন, যে কেউ আপনার ফেসবুক পোষ্ট এবং এংগেইজমেন্ট গুলো দেখলে আপনার সম্পর্কে একটা ধারনা তৈরি করে ফেলতে পারবে। আপনার পছন্দ, আপনার এটিটিউট, আপনার চিন্তা ভাবনা ইত্যাদি। ফেসবুক তাদের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য প্রতিনিয়ত প্রফেশনাল ফিচার যোগ করছে, যাতে লিঙ্কডইনের পারপাসটা ফেসবুকেই ফুল ফিল হয়। আর হচ্ছেও তাই। ফেসবুক এখন যতটানা ব্যাক্তিগত কারনে ব্যাবহার করা হয়, তার চাইতেও বেশি ব্যাবহার করা হয় প্রফেশনাল দরকারে। ২০০ মিলিয়নের অধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ফেসবুকে এক্সিস্টেন্স আছে। ফেসবুক পেইজ হতে শুরু করে গ্রুপ, সবকিছুই এখন প্রফেশনাল কারনে পরিচালিত হচ্ছে। ফেসবুককে ঘিড়েই পরিচালিত হচ্ছে অনেক ব্যাবসা। যাকে আমরা এফ কমার্সও বলে থাকি। শপিফাই এর মত ইকমার্স সিএমএস ফেসবুকের জন্যও তাদের সিস্টেম ডেভেলপ করেছে। আর যেহেতু এরকমটা হচ্ছেই, তার মানে ফেসবুক মার্কেটিং এর চাহিদা দিনে দিনে আরো বাড়বে। সুযোগ হবে ফেসবুক প্লাটফর্মটাকে কাজে লাগিয়ে নিজের ক্যারিয়ার ডেভেলপ করা। এটা হতে পারে একজন ইন্ডিভিডুয়াল হিসেবে ফেসবুক মার্কেটিং এর দক্ষতা কাজে লাগানো, অথবা নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য। আসুন ফেসুবক মার্কেটিং সম্পর্কে আর বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি।
ফেসবুক মার্কেটিং
ফেসবুক মার্কেটিং বলতে আমরা আসলে বুঝে থাকি ফেসবুক প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে আমরা আমাদের পণ্য, ব্র্যান্ড, সেবা সম্পর্কে আমাদের টার্গেট কাস্টোমারকে পরিচিত করে তোলা। এটি ফেসবুক প্লাটফর্ম ব্যবহার করে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেও হতে পারে, আবার ফেসবুক গ্রুপ, পেজ, প্রোফাইল থেকে অরগানিক ভাবেও হতে পারে।
যেহেতু দিনে দিনে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে তাই ফেসবুক মার্কেটিং এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো এখন একটি বড় রকমের বাজেট রেখে থাকে ফেসবুক মার্কেটিং এর জন্য।
কিছু ডাটা দেখা যেতে পারেঃ
- ফেসবুকের বর্তমানে (২০২১) একটিভ ব্যবহারকারির সংখ্যা ২.৮ বিলিয়ন।
- ২০০ মিলিয়ন ব্যবসা ফেসবুকে একটিভ আছে বর্তমানে (২০২১)।
- ৬৫% ফেসবুক ব্যবহারকারীর বয়স ৩৫ বছরের নিচে।
- ৯৮.৩% মানুষ ফেসবুক মোবাইল এপ থেকে ব্যবহার করে।
- পৃথিবীব্যাপী ফেসবুক ব্যবহারকারীরা গড়ে প্রতি মাসে ১৯.৫ ঘণ্টা ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে।
- ৮৬% আমেরিকান মার্কেটার ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে।
- ৭৮% আমেরিকান, ফেসবুকে পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখার পর সেই পণ্য কিনে থাকে।
উপরের প্রতিটি ডাটা আমাদেরকে ফেসবুক মার্কেটিং এর উপর আমাদের কেন দক্ষতা তৈরি করা দরকার তা সম্পর্কে আইডিয়া দেয়। ফেসবুক মার্কেটিং সম্পর্কে আমাদের জানতে হলে আমাদের ফেসবুক এলগরিদম সম্পর্কে জানতে হবে। ফেসবুকের এলগরিদম কিভাবে কাজ করে। কি ধরনের কন্টেন্ট আমাদের তৈরি করা উচিত। আর এ বেপারগুলোতে পর্যাপ্ত নলেজ না থাকলে ফেসবুক মার্কেটিং থেকে পর্যাপ্ত রিটার্ন জেনারেট করা কখনই সম্ভব হবে না।
ব্যাবসায়িক পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে যে কোন বিজনেসের সাধারন ফরমুলাটা অনেকটা এরকম “প্রোডাক্টটাকে যত বেশি মানুষের কাছে পৌছানো যাবে, তত বেশি সেল জেনারেট করা যাবে।”
তাই আমাদের ফেসবুক মার্কেটিং এর প্রথম গোল হবে কিভাবে বেশি মানুষের কাছে পৌছানো যায়। কি ধরনের কন্টেন্ট তৈরি করলে রিচ বেশি হবে। ফেসবুকের এলগরিদমটা এংগেইজমেন্ট নির্ভর। তারমানে আমার কন্টেন্টে যদি আপনি কমেন্ট করেন তাহলে আপনার ফ্রেন্ডদের নিউজফিডেও আমার কন্টেন্ট শো হবে। এভাবে যত এঙ্গগেইজমেন্ট জেনারেট করা যাবে, তত ভিজিবিলিটি বাড়বে। যত ভিজিবিলিটি বাড়বে, তত সেল বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে।
কীভাবে বিভিন্ন রকমের এঙ্গেজিং পোষ্ট এর মাধ্যমে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্রেজেন্সকে আরো ইম্প্রুভ করতে পারবেন, সেই স্ট্র্যাটেজি গুলোকে আমি ৪৬৫+ সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্ট আইডিয়া পিডিএফ এ লিস্ট ডাউন করেছি। এই পিডিএফ এ আপনি পেয়ে যাবেন ১৫ মাসের ইউনিক কন্টেন্ট আইডিয়া যা আপনার কন্টেন্ট মার্কেটিং এ হেল্প করবে।
ফেসবুক এলগরিদম
ফেসবুকের এলগরিদমকে বলা হয়ে থাকে এডজ রেঙ্ক (Edge Rank). এই এলগরিদম মুলত তিনটা বিষয়ের উপর কাজ করে থাকে। Affinity, Weight এবং Time decay।
Affinity: এটা মুলত আপনার পোস্টের এংগেইজমেন্ট বিহেভিয়ার। আপনার পোস্টে কি পরিমান এংগেইজমেন্ট হয়। কারা করে, কারা করে না। কত ভাগ করে এবং কত ভাগ করে না। যারা এংগেইজড হয় তারা কি করে? লাইক, শেয়ার, কমেন্ট? এই ডাটা গুলোর উপর ভিত্তি করেই আপনার পোস্ট কতজনের নিউজফিডে শো হবে তা ফেসবুক ডিসাইড করে থাকে।
Weight / Type of Content: এটা মুলত আপনার পোস্টের ধরন। আপনি কি ধরনের কন্টেন্ট তৈরি করছেন অথবা শেয়ার করছেন? টেক্সট, ছবি, ভিডিও? ফেসবুক এক এক ধরনের পোস্টকে এক এক ভাবে ট্রিট করে। যেমন বর্তমান সময়ে ভিডিও এবং ছবি নিউজফিডে বেশি শো হয়ে থাকে। আবার মোবাইল থেকে ভিজিট করলে ভিডিও বেশি শো হয়।
Time Decay: এইটা মুলত আপনার পোস্টটি কতটুকু পুরানো তার উপর নির্ভর করে। ফেসবুক মুলত মোস্ট রিসেন্ট পোস্টগুলো নিউজ ফিডে বেশি দেখায়। তাই আপনার পোস্ট মুলত যত পুরানো হতে থাকবে, আপনার রিচ তত কমতে থাকবে। তবে নিয়মিত ভাবে এংগেইজমেন্ট পেলে রিচ বেড়ে যাবে।
এখন, একটা বেপার আপনার মাথায় রাখতে হবে, আপনার পোস্টে যত বেশি এংগেইজমেন্ট হবে, আপনার পেইজের ভ্যালু তত বাড়তে থাকবে। একই ভাবে, আপনার এঙ্গেইজমেন্ট যত কম হবে, আপনার পেইজের ভ্যালু তত কমতে থাকবে। ধরেন আপনার পেইজে ১০,০০০ ফলোয়ার আছে এবং কেউ আপনার কোন পোস্টে এঙ্গেইজ হয় না। তারমানে Edge Rank এলগরিদম অনুসারে আপনার পেইজের নেগেটিভ মার্কিং হবে। আপনার নতুন পোস্টগুলোর রিচ তত কমতে থাকবে। তাই আপনার কত জন ফ্যান আছে তার চাইতে আপনার কত পার্সেন্ট ফ্যান এঙ্গেইজ হয় এটা গুরুত্ব পুর্ন। যত বেশি ফ্যান এঙ্গেইজ হবে, আপনার পেইজের ভ্যালু তত বাড়বে। তাই আমাদেরকে ফেসবুকে কিভাবে এঙ্গেইজমেন্ট বাড়ানো যায় তা নিয়ে কাজ করতে হবে। কন্টেন্ট প্লানিং করতে হবে। কন্টেন্ট ক্যালেন্ডার তৈরি করতে হবে যাতে আমরা কম সময়ে অরগানাইজড ভাবে বেশি এঙ্গেইজিং কন্টেন্ট তৈরি এবং শেয়ার করতে পারি।
এঙ্গেইজমেন্ট বাড়াতে এই প্রুভেন মেথডটি ফলো করতে পারেন।
বর্তমান সময়ে নিচের কন্টেন্ট গুলো ক্রমান্বয়ে নিউজফিডে বেশি দেখা যায়
- ভিডিও
- GIF
- ইমেইজ
- টেক্সট উইথ কালার ব্যাকগ্রাউন্ড (ফেসবুকের নিজশ্ব ফিচার)
- টেক্সট কন্টেন্ট
বর্তমান সময়ে ফ্যান পেইজের চাইতে গ্রুপের পোস্ট গুলো নিউজফিডে বেশি শো হয়।
আবার আপনি যখন এঙ্গেইজমেন্ট জেনারেট করার চেষ্টা করবেন, তখন একজন মার্কেটার হিসেবে আপনার প্রথম লক্ষ হওয়া উচিত কমেন্ট এবং শেয়ার জেনারেট করা। তারপর লাইক এবং রিয়েকশন। তারপর পোস্ট ক্লিক। এভাবে জেনারেট করতে পারলে আপনি সর্বাধিক রিচ আশা করতে পারেন।
ফেসবুক পেজ এবং ফেসবুক গ্রুপ
ফেসবুক পেজ এবং ফেসবুক গ্রুপ দুটিই আপনার ফেসবুক মার্কেটিং এর গুরুত্বপুর্ন ট্যুল। ফেসবুক পেজ হচ্ছে আপনার কর্পোরেট আইডেন্টিটি। যা আপনাকে ডাটা ট্র্যাকিং, এডভারটাইজমেন্ট ফ্যাসিলিটি সহ সব ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে। তবে ফেসবুক পেজ তাদের অরগানিক রিচ প্রতিনিয়ত কমাচ্ছে। যার ফলে আপনার ফেসবুক মার্কেটিং এর একটি বড় অংশ নির্ভর করবে আপনার এডভারটাইজমেন্ট ফানেল এবং বাজেটের উপড়ে।
অন্যদিকে ফেসবুক গ্রুপ আপনাকে অরগানিক সেল এবং রিচ পেতে সহায়তা করবে। ফেসবুক গ্রুপের পোস্ট গুলো এখন নিউজফিডে বেশি দেখা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে গ্রুপটি অবশ্যই পাবলিক গ্রুপ হতে হবে। ফেসবুকে মূলত তিন ধরনের গ্রুপ তৈরি করা যায়।
- পাবলিক গ্রুপ
- প্রাইভেট গ্রুপ
- সিক্রেট গ্রুপ
ফেসবুক মার্কেটিং কোর্স
ফেসবুক মার্কেটিং এর মধ্যে আসলে কয়েকটি জিনিশ চলে আসে আর যে যায়গা গুলতে আমাদের দক্ষতা তৈরি করতে হবে।
- ফেসবুকের এলগরিদম এবং কাস্টমারের কথা মাথায় রেখে এঙ্গেইজিং কন্টেন্ট তৈরি
- অর্গানিক ট্রাফিক/এঙ্গেইজমেন্ট/সেল জেনারেট করা
- ফেসবুক এডভারটাইজমেন্ট
ইউটিউবে প্রচুর কন্টেন্ট রয়েছে ফেসবুক মার্কেটিং এর উপর। এছাড়া ফেসবুকের নিজস্ব একটি কোর্স রয়েছে যাকে বলা হয়ে থাকে ফেসবুক ব্লুপ্রিন্ট।
এছাড়া আপনাদের জন্য আমার তৈরি করা একটি ফ্রি কোর্স আছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য। কোর্সটি পেতে এখানে ক্লিক করুন।
মার্কেটিং ক্যাম্পেইন
যে কোন মার্কেটিং এর ইন্ড গোল থাকে সেল জেনারেট করা। আর তা করার জন্যই বিভিন্ন রকমের মার্কেটিং ক্যাম্পেইন নিয়ে কাজ করতে হয়। ব্র্যান্ড এওয়ারনেস, লিড জেনারেশন, সেল জেনারেশন ইত্যাদি। যেকোন ফেসবুক মার্কেটিং ক্যাম্পেইন থেকে কম খরচে ভাল রেজাল্ট জেনারেট করার জন্য আপনাকে একটি ফানেল তৈরি করতে হবে। রেন্ডম পোস্ট এবং এড থেকে আপনি খুব ভাল রিটার্ন পাবেন না।
আর মার্কেটিং ফানেল নিয়ে কাজ করতে গেলে একটু পড়াশুনা করতে হবে, শেখার চেষ্টা করতে হবে একটি ফেসবুক মার্কেটিং এর ফানেল কিভাবে কাজ করে।
মনে রাখবেন, আপনার ফেসবুক মার্কেটিং ক্যাম্পেইন কাজ করছে নাকি করছেনা তা আইডেন্টিফাই করতে পারবেন কতগুলো লিড জেনারেট হচ্ছে / কতগুলো ফোন / ইমেইল / ম্যাসেজ পাচ্ছেন তার ডাটা এনালাইসিস করে। আপনাকে ট্রেন্ড এনালাইজ করতে হবে, রিটার্ন ক্যালকুলেট করতে হবে।
মার্কেটিং ক্যাম্পেইন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা পেতে এই পোস্টটি পড়তে পারেন।
আমি এবং বেলাল ভাই মিলে আপনাদের জন্য একটি ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার একটি অল ইন ওয়ান সলিউশন ডেভেলপ করেছি বাংলাতে।
প্রো টিপঃ আপনি যখন অন্যের তৈরি করা কন্টেন্ট শেয়ার করছেন, চেষ্টা করেন সেখানে নিজের মতামত যোগ করে তারপর শেয়ার করতে। বিস্তারিত জানতে Content DJ রিলেটেড এই পোস্টটি পড়ে দেখতে পারেন।
এছাড়াও ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত পাবেন এখানেঃ ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
আমার ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে এখানে ক্লিক করুন।
এবিসিডিই, প্রোডাক্টিভিটি মেথড সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।