আমরা যারা অনলাইন প্রফেশনাল আছি আমাদের বেশির ভাগের দিনের শুরুটাই হয়, ইমেইল চেক করার মধ্যে দিয়ে। অথবা ফেসবুক ব্রাউজিং এর মাধ্যমে! বিছানাতে থাকা অবস্থাতেই মোবাইলে ইমেইল চেক করি। তারপর ল্যাপটপ চালু করে আরেকবার। তারপর একটু পর পর চেক করা, রিপ্লাই করা চলতেই থাকে। অথচ আমাদের সবচাইতে প্রোডাক্টিভ টাইম হচ্ছে সকালে ঘুম থেকে উঠার পরের দুই থেকে তিন ঘন্টা। বড় বড় আইটি প্রফেশনালরা তাদের ড্রেস কোড নিয়ে মাথা ঘামান না, তার একটা কারন হচ্ছে ব্রেইনকে মোষ্ট ইম্পরটেন্ট কাজের জন্য ফ্রেস রাখা। ঘুম থেকে উঠেই যদি মনযোগ দিতে হয় কি পরে অফিসে যাব, তাহলে মোষ্ট প্রোডাক্টিভ শেষনটা লেস ইম্পরটেন্ট কাজ দিয়ে শেষ হয়ে যায়। আর আমরা হাটি ঠিক তার উলটা পথে।
আবার ইমেইলের প্রসঙ্গে চলে আসি। একটু পর পর আমরা আমাদের এক্সিস্টিং কাজ বাদ দিয়ে ইমেইল চেক করি। মনযোগ বার বার ডাইভার্ট হয়। আর এই মাল্টিটাস্কিং বিহেভিয়ারের জন্য, আমরা অল্প সময় কাজ করলেও বেশি ক্লান্ত হয়ে যাই। ঘুম থেকে উঠে ইমেইল চেইক, ১০ মিনিট পর পর ইমেইল চেইক করা। আমিও এর ব্যাতিক্রম ছিলাম না। তবে সত্যি কথা হচ্ছে ৯৯ ভাগ সময়েই আমরা যেই ইমেইল গুলা পাই, তার রিপ্লাই ঘুম থেকে উঠার দুই তিন ঘন্টা পরে দিলেও সমস্যা হবার কথানা। ধরেন আমার বেশীর ভাগ ক্লায়েন্ট আমেরিকান। তাদের আর আমার টাইম জোন আলাদা। তাই আমি প্রতিদিনই ঘুমিয়ে থাকা অবস্থাতে তাদের কিছু ইমেইল আসে। আগে আমি ঘুম থেকে উঠেই তার রিপ্লাই দিতাম। কিন্তু এখন তা দেই না, আমি ঘুম থেকে উঠার এট লিষ্ট দুই ঘন্টা পর তাদের রিপ্লাই দেই। আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না। কারন আপনার ক্লায়েন্ট আপনার আর তার টাইম ডিফরেন্সের ইস্যুটা জানে। তাই আপনি যদি ঘুম অবস্থাতে ৬ ঘন্টা রিপ্লাই না দিয়ে থাকতে পারেন, তাহলে ঘুম থেকে উঠেও আরো দুই ঘন্টা আপনি টাইম নিতে পারেন। একই কাজ করতে পারেন কাজ করার মধ্যেও।
অফিস টাইমে আপনি একটা ইমেইল পাবার ২-৩-৪ ঘন্টা পরে রিপ্লাই দিলেও সেইটা আসলে স্বাভাবিক। সব প্রফেশনালরাই এই বেপারটা বুঝবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই সময়টা আপনি কেন নিবেন? তার উত্তর হচ্ছে Decision Fatigue । সময়ের সাথে সাথে আপনার ডিশসন নেয়ার, কাজ করার ক্ষমতা, প্রোডাক্টিভিটি আপ ডাউন করে। যেহেতু সকালের টাইমটা সবচাইতে বেশি প্রোডাক্টিভ, তাই এই সময়টা আমাদের ব্যয় করা উচিত সবচাইতে গুরুত্ব পুর্ন কাজ করার জন্য। বিশেষ করে ক্রিয়েটিভ / সৃষ্টিশিল কাজ গুলা করা যেতে পারে। যেমন কন্টেন্ট তৈরী করা, প্রেসেন্টেশন তৈরী করা ইত্যাদি। একই ভাবে একজন গ্রাফিক ডিজাইনার, প্রোগ্রামার, রাইটার তার তার ক্ষেত্র থেকে সবচাইতে গুরুত্ব পুর্ন কাজ করতে পারে।
আমি সকাল বেলা মুলত কন্টেন্ট তৈরীতে ব্যয় করি। অথবা কোন রিসার্চ রিলেটেড কাজ। আপনি আপনার কাজের ধরন এনালাইজ করে আপনার সবচাইতে গুরুত্ব পুর্ন কাজটা সকাল সকাল করে ফেলতে পারেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে ইমেইল কিভাবে চেইক করবেন। এটার জন্য আসলে তেমন কোন রকেট সাইন্স এপ্লাই করার দরকার নাই। শূধু ইমেইল চেক করা এবং রিপ্লাই করার জন্য কিছু ব্লক তৈরী করেন। ব্লক তৈরী করতে নিচের যে কোন একটা পদ্ধতি ব্যাবহার করতে পারেন।
১) যে কোন টাস্কের শেষেঃ
কোন টাস্ক চলাকালিন সময় ইমেইল চেক করার স্বভাবটা পরিবর্তন করে, যে কোন টাস্ক শেষে চেক করতে পারেন। যেমন ধরেন, আমি এখন আর্টিকেল লিখছি, এইটা চলাকালিন সময়ে আমি ইমেইল চেক করবো না। এটা শেষ হলে হয়ত আমি ইমেইল চেক করবো এবং রিপ্লাই দিব।
২) কাজের বিরতীর সময় / আগে / পরেঃ
আপনি আপনার অফিস আওয়ারে অবশ্যই ব্রেক নেন / নিবেন। এখন এই ব্রেক টাইম গুলাতে আপনি ইমেইল চেক করতে পারেন। যেমন ধরেন, সকালে কাজ শুরু করলেন। দুই ঘন্টা পর একটা টি ব্রেক নিলেন। ব্রেকের সময় / আগে / পরে আপনি ইমেইল চেক করতে পারেন। তারপর আবার লাঞ্চের সময়। অফিস থেকে বের হবার সময়। রাতে ঘুমাতে যাবার সময়, অথবা রাতের খাবার খাওয়ার সময়।
সেইম ফরমুলা আপনি ব্যাবহার করতে পারেন আপনার ফেসবুক ব্রাউজের ক্ষেত্রেও। এখন আপনি যদি সাইকোলজিকালি স্ট্রং না হন, অথবা আরো বেটার সলিউশন চান, তাহলে
- ফেসবুক এবং ইমেইল ট্যাব ব্রাউজার থেকে কেটে রাখেন।
- লগ আউট হয়ে থাকেন।
- মোবাইলটা হাতের নাগাল থেকে একটু দূরে রাখেন।
মেইল চেক করা, ফেসবুক ব্রাউজকরাটাকে যতটা সম্ভব কষ্টকর করবেন, দেখবেন ব্রাউজ করার পরিমানটা কমে যাবে।
আসলে আমরা যদি প্রোডাক্টিভ হতে পারি, তাহলে আট ঘন্টার অফিস আওয়ারেই অনেক কাজ শেষ করা যায়। কিন্তু আমরা মুলত ১০ ঘন্টা পিসির সামনে থাকি, কাজ করি ৬ ঘন্টা। বাকি চার ঘন্টা টাইম ওয়েস্ট।
প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর কিছু টিপ্স পেতে এই ব্লগ পোষ্টটি পড়তে পারেন। আর কনফিডেন্স বাড়াতে এটা পড়তে পারেন।