জীবনের সব যায়গাতেই একটা সাধারন সমীকরণ আছে – যা যত সহজ তার ভ্যালূ তুলনামূলক ভাবে তত কম। অন্য ভাবে বলা যায়, যে কাজগুলো সবাই পারে, সেই কাজ গুলোর চাহিদা এবং পারিশ্রমিকও তত কম। তাই আপনাকে সর্বদা কষ্ট করে যেতে হবে বাকিদের চাইতে একটু বেশি জানার এবং পারার। এফিলিয়েট মার্কেটিং এই শব্দটা শুনলেই এটা ভাবার দরকার নেই যে এখানে টাকা গড় গড় করে আসতে থাকবে, আবার এটা ভাবারও দরকার নেই যে এখানে কিছুই করা যায় না। আপনাকে শুধু শিখতে হবে কিভাবে করা যায় এবং আপনি যা শিখেলেন তার সঠিক প্রয়োগ করতে হবে।
একজন এফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে আসলে আপনি কি ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন
- আপনাকে কোন পন্য তৈরী করতে হচ্ছে না
- আপনাকে কোন পন্য কিনতে হচ্ছে না
শুধুমাত্র জানতে হচ্ছে নিশ মার্কেট রিসার্চ (Niche Market Research) কিভাবে করতে হয়, সাইট তৈরী কিভাবে করতে হয়, কিভাবে কন্টেন্ট তৈরী করতে হয় এবং সেই সাইটকে কিভাবে র্যাংক করতে হয়।
প্রতিটা ধাপই অনেক বড় এবং অনেক কিছুই যোগ করা যায়। তবে এখন এত বেশি কিছু ভাবার দরকার নেই। এখন আপনার যে কাজগুলো করা দরকার তা হচ্ছে
১# শুরু করে দিন
যতটুকুই শিখেছেন তা নিয়ে কাজ করা শুরু করে দিন। আপনি যদি ড্রাইভিং শিখতে চান তাহলে আপনি যতই ইউটিউব ভিডিও দেখেন না কেন, অথবা যতই বড় বড় ড্রাইভারের সাথে আলাপ করেন না কেন, শিখতে হলে আপনাকে গাড়ি নিয়ে বের হতেই হবে। একই ফর্মুলা অনলাইন এবং অফলাইনের সব কর্মক্ষেত্রে। আপনাকে এখন শুরু করতে হবে। শুরু করলেই দেখবেন প্রতিটা ধাপেই আপনি সমস্যা পাচ্ছেন। এইসব সমস্যা সমাধানের জন্য আপনাকে গুগুল করতে হবে অথবা কারো সাহায্য নিতে হবে। আর এইভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র একটা সমস্যার সমাধান থেকেই আপনি সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন।
২# ফেইল করতে ভয় পাবেন না
ছোটবেলা থেকেই হয়ত শুনে এসেছেন – ফেইলর ইস দি পিলার অব সাকসেস। এইবার সেই পিলার গড়ার পালা। প্রতিটি মানুষের চিন্তা ভাবনা আলাদা, তাদের কাজের ধরনও আলাদা। তাই যতই কেইস স্টাডি পড়েন, অথবা সফল ব্যাক্তিদের সাথে আলোচনা করেন, তাদের থেকে আপনি কখনই শত ভাগ সলিউশন পাবেন না, কারন আপনার সমস্যা এবং তার সমস্যা একরকম নাও হতে পারে। আপনি যত সমস্যাতে পড়ছেন, আপনি তত বেশি কিছু শিখার সুযোগ পাচ্ছেন। আপনাকে শুধু খুজে বের করতে হবে এই সমস্যা থেকে কিভাবে বের হওয়া যায়। আর এক্ষেত্রে পসিটিভ আত্মবিশ্বাস খুবই দরকারি। আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এই পোষ্টটি অবশ্যই পড়ে দেখবেন।
৩# রিপিটেড মিস্টেক বার বার করা যাবে না
আপনি কতবার ব্যার্থ তা বড় কথা নয়। আপনি ব্যার্থতা থেকে কি শিখলেন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ব্যার্থতা থেকেই অনেক কিছু শিখার আছে। আপনি যদি একই ভুল বার বার করতে থাকেন তখন সেখান থেকে আসলে নতুন করে শিখার থাকে না। অথবা বলতে হবে যে আপনি আসলে আপনার ভুল এনালাইসিস করেন না।
একটা উদাহরন দেই, ২০১৩ সালে হঠাৎ করে আমার মনে হল আমি সারাদিন কম্পিউটারের সামনে বসে থাকলেও যে পরিমান কাজ করতে পারার কথা সেটা করতে পারছি না। এর কারন হিসেবে আমি ২ টা বিষয়কে চিহ্নিত করলাম
- ঘন ঘন ফেসবুক ব্যাবহার করা
- মাল্টি টাস্কিং
অর্থাৎ এই দুটো যায়গাতে আমার ভুল ছিল। আমি এর সলিউশন বের করতে সচেষ্ট হলাম। আমি কিছু এপ খুজে পেলাম এবং সেগুলো থেকে রেস্কিউটাইম ব্যাবহার শুরু করলাম। (সারাদিন আপনার কম্পিউটার থেকে যেসব সাইটগুলো ভিসিট করছেন অথবা আরও যা করছেন তার উপর ভিত্তি করে রেস্কিউটাইম একটা সাপ্তাহিক রিপোর্ট দিয়ে থাকে)।
এখন আমার কাজ হচ্ছে এই সমস্যার সমাধান করা। সমাধান হিসেবে আমি যা শুরু করলাম তা হচ্ছে
- যখন তখন ফেসবুক ব্যাবহার করা কমিয়ে দিলাম। নির্দিষ্ট কিছু টাস্ক সম্পূর্ন না করার আগে ফেসবুকে না ঢুকার সিদ্ধান্ত নিলাম। কাজ সম্পূর্ন করে প্রয়োজনীয় রিপ্লাই দেওয়া শুরু করলাম। তারপর আবার ব্রাউজার থেকে ফেসবুক ট্যাব কেটে দিয়ে কাজ শুরু করতে লাগলাম যেন ফেইসবুক আমার মনযোগ নষ্ট করতে না পারে।
- মাল্টি টাস্কিং যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলাম। এজন্য আমি আসানা (ASANA) ব্যাবহার করে থাকি।
কিভাবে প্রোডাক্টিভিটি বাড়াবেন তা জানতে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
আরো পড়ুনঃ ১৫ টি টুল যা আপনার ছোট ব্যাবসাকে বড় করতে সহায়তা করে থাকবে।
৪# টিম বিল্ডআপ করুন
যারা মাত্রই শুরু করছেন তাদের জন্য টিম বিল্ড আপ এর গুরুত্ব অনেক। প্রবাদে আছে, দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ। আপনি একা একা অনেক কিছুই জানবেন না, পারবেন না। কারন শুরুর দিকে আপনার অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকবে – এটাই স্বাভাবিক। তখন পর্যাপ্ত ইনভেস্টমেন্ট না থাকার সম্ভাবনা বেশি। তখন কয়েকজন মিলে একসাথে কাজ করলে, সবাই মিলে স্টাডি করলে, আলোচনা করলে কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। যে লক্ষ্যে আপনার পৌছাতে ৬ মাস লাগতো টিম হিসেবে কাজ করলে তা ২-৩ মাসেই পৌছানো সম্ভব।
৫# অনেক পড়ুন, তার সাথে সাথে একটা একটা করে প্র্যাকটিস শুরু করে দিন
নতুন, পুরান সহ আমাদের অনেকের মধ্যেই একটা কমন সমস্যা আছে, সেটা হচ্ছে প্রাক্টিস অথবা এক্সপেরিমেন্ট না করা। আমরা অনেক কিছুই পড়ি, অনেক কিছুই জানি। আমরা জানি কি করলে কি হয়। কিন্তু আমরা বেশির ভাগ সময় সেইটা চেষ্টাই করি না। কিছু বড় মার্কেটারের সাথে কাজ করার সুবাদে দেখেছি, তারা ছোট বড় অনেক কিছুই এক্সপেরিমেন্ট করেন। তারা জানা জিনিসটাকেই কিভাবে আরো কার্যকরী করা যায় সেখানে কাজ করেন। আপনাকেই একই কাজ করতে হবে। আপনি জানেন কিভাবে কিওয়ার্ড (Keyword) রিসার্চ করতে হয়। এবার আপনার জানাকে কাজে লাগান। বারবার চেষ্টা করতে করতে প্রথমে আপনার স্পিড বাড়বে। তারপর দেখবেন নতুন নতুন কৌশল আপনার অজান্তেই সামনে চলে আসবে। একই পদ্ধতি সব ক্ষেত্রেই ব্যাবহার করুন।
আশা করি এই গাইডলাইন গুলো আপনাদের সবার কাজে লাগবে। আজ প্রায় ২ মাস পর বাংলাতে নতুন পোষ্ট লিখলাম। আশা করি এখন থেকে আবার নিয়মিত লিখতে পারবো।
আপনার মন্তব্য কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন, ব্যাক্তিগত ভাবে চেষ্টা করবো সবাইকে রিপ্লাই দিতে।