বাসায় বসে একাধারে কাজ করা যেমন মজার হতে পারে, আবার বিরক্তিকরও হতে পারে। বিশেষ করে যাদের অভ্যাস নেই বাসায় বসে কাজ করার তাদের জন্য ভাল লাগুক আর না লাগুক, প্রোডাক্টিভিটি ইস্যু হবে।
তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এ সমস্যা থেকে বের হওয়া সম্ভব। এই পোস্টে আমি কিভাবে বাসায় বসেও প্রোডাক্টিভিট ওয়েতে অফিসের সব কাজ একই রকম ভাবে করা যাবে তা নিয়ে আলোচনা করব।
১) নিজের সারাদিনের কাজের প্লান আগেই তৈরি করতে হবেঃ
বাসায় এবং অফিস, দুই যায়াগতেই প্রোডাক্টিভ হতে হলে নিজের সারাদিনের কাজের প্লান হয়ত আগের দিন রাতে অথবা সেদিন সকালেই করে ফেলতে হবে। মূলত সারাদিনের কাজের প্লান করতে ৫-১০ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়।
প্লান তৈরি হয়ে যাবার পর এনশিউর করতে হবে আমরা ঠিক ঠাক ভাবে তা মেনে চলছি।
যতটুকু সম্ভব ডেস্ট্রাকশন এভয়েড করতে হবে। কাজের সময় পার্সোনাল কল, মেসেজিং থেকে বিরত থাকতে হবে। অকারণে একটু পর পর ইমেইল চেক করার অভ্যাস দুর করতে হবে।
সারাদিনের কাজের প্লান যেকোন প্রজেক্ট/টাস্ক ম্যানেজমেন্ট ট্যুলে রাখা যায়, অথবা কাগজেও লিখে রাখা যায়। চাইলে গুগল ক্যালেন্ডার ব্যবাহার করা যায়।
২) কাজের জন্য বাসার মধ্যে আলাদা জায়গা তৈরি করাঃ
এরকম কি হয়, সারাদিন যাই করি না কেন, রাতে নিজের বাসায় এসে ঘুমাতে না পারলে ভাল লাগে না? বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই এমনটি হয়ে থাকে।
কাজের ক্ষেত্রেও এমন হতে পারে, নিজের ডেস্ক, নিজের চেয়ার। যেহেতু বাসা থেকে কাজ করবো তার মানে আমার সেই রেগুলার ডেস্ক থাকছে না, তার মানে এটা নয় যে যখন যেখানে খুশি সেখানে বসেই কাজ শুরু করবো। ভাল হয় যদি বাসার মধ্যেই একটি কাজের জায়গা আলাদা করা যায়। যদি সম্ভব হয়, ন্যাচারাল লাইট আসে এমন কোন জায়গাতে সেট করতে পারলে ভাল।
৩) অফিস টাইম মেইন্টেইন করা এবং নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা:
ঘরে বসে কাজ করা মানে সময় বাচানো (যাতায়াত সময়, খাবার সময়) এবং সাথে এনার্জি। এর মানে এটা নয় যে আমি যখন খুশি তখন কাজ করবো। বাসায় বসে কাজ করলেও অফিস টাইম মেইন্টেইন করা খুবই গুরুত্বপুর্ন। ঠিক সময়েই কাজ শুরু করা উচিত। যখন কাজ শুরু করছেন, গ্রুপ মেসেজে গুড মর্নিং লিখে জানিয়ে দেয়া যেতে পারে যে, আমি কাজে বসেছি। যেহেতু সবাই যার যার বাসা থেকে কাজ করছে, তাই উচিত যতটা সম্ভব যোগাযোগ রক্ষা করা। এমনকি আগের চাইতেও বেশি, যাতে ম্যানেজমেন্টের মনে না হয় যে আমি কাজ করছি না।
সময় মত গ্রুপ মিটিং গুলোতে উপস্থিত থাকা, নিজের ইনপুট দেয়া।
৪) আইসোলেটেড ফিল করা যাবে নাঃ
অনেকেই বাসায় বসে একটু লম্বা সময় কাজ করলে নিজেকে আইসোলেটেড মনে করে, এবং এটাই স্বাভাবিক। যেহেতু কারও সাথে দেখা হচ্ছে না, গল্প হচ্ছে না, একসাথে চা/কফি খাওয়া হচ্ছে না। তাই অনেকেই নিজেকে একা একা ফীল করতে পারেন। বোরিং ভাব চলে আসতে পারে।
তাই উচিত প্রতি দিন, অথবা প্রতি সপ্তাহে কলিগদের সাথে অনলাইনেই ভিডিও চ্যাট করা। কফি খেতে খেতে গল্প করা যায়। কাজের বাইরের গল্প। অফিসে কী হয়? ৯ ঘণ্টা অফিস হলে ওখানে ২০-৩০ মিনিটের সময় থাকে যখন আমরা কাজ থেকে দুরে থাকি। কফি খাই। গল্প করি। এই অভ্যাসটা অনলাইনেও করা সম্ভব যদি চাই। একটা নির্দিষ্ট সময় আমরা চা খেতে খেতে ভিডিও কনফারেন্স করতে পারি।
আমি একজন ডাক্তারের সাথে কাজ করছি, এবং উনি আমাকে কিছু সাজেশন দিয়েছেন, যা আমার খুব ভাল কাজ করছে। আমাদের উচিত প্রতি ১ ঘণ্টা কাজের পর ৫ মিনিটের একটি ব্রেক নেয়া। হয়তো হাটাহাটি করা, চোখ বন্ধ করে থাকা, কফি বানানো ইত্যাদি। আপনি করে দেখতে পারেন। কাজে দিবে আশা করছি।
৫) সঠিক উপায়ে ফিডব্যাক দেয়া এবং নেয়াঃ
পরিস্থিতে যেমনি হোক না কেন, দিন শেষে আমাদের কাজ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের গ্রোথ নিয়ে ভাবতে হবে। তাই যেকোন কঠিন পরিস্থিতে আমাদেরকে আরও মাথা ঠান্ডা রেখে আরও ডেডিকেটলি কাজ করতে হবে।
টিম হিসেবে যখন কাজ করা হয় তখন টিমের মধ্যে ফিডব্যাক দেয়া নেয়ার প্রয়োজন পরে। কিন্তু মনে রাখতে হবে যেহেতু এখানে আমরা সবাই যার যার বাসা থেকে কাজ করছি, তাই না চাইলেও একটু দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। এসময় যে কোন নেগেটিভ ফিডব্যাক ভুল বোঝা বুঝি তৈরি করতে পারে।
তাই এই সময়টাতে যেকোন ফিডব্যাক দেয়ার সময় নিচের বেপার গুলো এপ্লাই করা যেতে পারে।
- মেসেজিং এপ এর মাধ্যমে ফিডব্যাক দেয়া উচিত নয়, কেননা এখানে ডিটেইল লিখার স্কোপ কম থাকে, যা ভুল বুঝা বুঝির তৈরি করতে পারে।
- ভিডিও কল করে ফিডব্যাক দেয়া যেতে পারে, এটাতে ডিটেইল বলা সহজ, এছাড়া ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন দেখা যাওয়ার কারণে বেপারটা সহজ হয়।
- ইমেইলের মাধ্যমে ফিডব্যাক দেয়া যাতে পারে, তবে তা ডিটেইল হতে হবে।
৬) ভিডিও কল করাঃ
যে কোন আলোচনা করার ক্ষেত্রে যদি সম্ভব হয় ভিডিও কল করা। এটাতে প্রোডাক্টিভিটি অনেক বেড়ে যায়, বন্ডিং ক্রিয়েট হয়।
৭) দরকারি ট্যুল সম্পর্কে আইডিয়া রাখাঃ
বাসা থেকে অফিস করার জার্নিটা খুবই ইফেক্টিভ হবে যদি প্রয়োজনীয় টুল সম্পর্কে আইডিয়া থাকে। নিচে আমি কিছু টুল সম্পর্কে আইডিয়া দিচ্ছি, আপনাদের কাজে লাগতে পারে।
১) ভিডিও কনফারেন্সঃ জুম, স্কাইপ, গুগল হ্যাঙ্গাউট
২) ফাইল শেয়ারিংঃ গুগল ড্রাইভ এবং ড্রপবক্স
৩) টাইম ট্রেকারঃ ডেক্স টাইম এবং টাইম ডক্টর।
৪) প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টঃ আসানা, ট্রেলো, বেসক্যাম্প
৫) ইনস্ট্যান্ট মেসেজিংঃ হোয়াটস এপ, স্কাইপ, টেলিগ্রাম, স্ল্যাক, ভাইবার।
আশা করছি পোষ্টটি আপনাদের কাজে লাগবে। শেয়ার করে অন্যদের দেখার সুযোগ করে দিন।
আমার ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে এখানে ক্লিক করুন।