সিঙ্গাপুরের একটা বড় কন্সট্রাকশন কোম্পানি। পুরো দমে কাজ চলছে। কন্সট্রাকশন কম্পানিতে মুলত অনেক ওয়েস্টেজ ম্যাটেরিয়াল বের হয়। কাজের সাইটে প্রতিদিন অনেক ট্রাক আসা যাওয়া করে থাকে। একদিন এক টপ লেভেল ম্যানেজমেন্ট খেয়াল করলেন এক ট্রাক ড্রাইভার খুবই ছোট একটি ওয়েস্টেজ ম্যাটেরিয়াল মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে সে তা তার ট্রাকে তুলে নিলেন। এবং চলে গেলেন। টপ লেভেল ম্যানেজমেন্টের সেই ব্যাক্তি ট্রাকের নম্বর টা মনে রাখলেন এবং যেই প্রতিষ্ঠান থেকে তারা ট্রাক আউটসোর্স করেছিলেন, সেখানে ফোন দিলেন। এবং বললেন এই ট্রাক এবং ট্রাক ড্রাইভারকে যাতে কখনই তার কাজের সাইটে না পাঠানো হয়। যদি হয়, তাহলে উনি প্রজেক্ট উইথড্রো করবেন।
আমরা সাধারন ভাবে চিন্তা করলে এমনটাই হয়ত ভাববো যে ট্রাক ড্রাইভার তেমন খারাপ কি করলেন! ওয়েস্টেইজ ম্যাটেরিয়ালতো এমনিতেই তারা ফেলেই দিতেন, উনি ছোট একটা টুকরা তুলে নিয়ে গিয়েছেন তাতে সমস্যাই বা কি! উনি এটা বিক্রি করে হয়ত দুইটা পয়সা কামাবেন।
কিন্তু ডেভেলপড কান্ট্রির প্রফেশনালরা আসলে একটু অন্য ভাবে ভেবে থাকে। উনার মাথাতে কাজ করেছে আজ উনি ওয়েইস্টেইজ ম্যাটেরিয়াল নিয়েছে, তাও আমাদের অনুমতি ছাড়াই। উনাকে অবজেকশন না দিলে হয়ত কাল আরো কিছু নিবে। বাইরে বিক্রি করবে। তারপর এটা উনার অভ্যাসের মধ্যে ঢুকে পড়বে। তারপর হয়ত কোন এক সময় ওয়েইস্টেইজ ম্যাটেরিয়াল নয়, দরকারি ম্যাটেরিয়ালো নেয়া শুরু করবে।
উনার ভাবনাটাকে আপনি ভুল বলতে পারবেন না। সব ভয়ানক রকমের খারাপ জিনিশ এভাবে ছোট ছোট অপরাধ দিয়েই শুরু হয়। অনুরুপ ভাবে অনেক বড় মহৎ কাজ ছোট ছোট ভাল কাজ থেকেই শুরু হয়।
আমরা আসলে কোন দিকে যাব তা অনেকটাই নির্ভর করে আমাদের এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বভাব গুলোর উপর। আমরা কিভাবে ভাবি, কিভাবে রিয়াক্ট করি, কিভাবে প্রেসেন্ট করি ইত্যাদির উপর।
যদিও আমার আজকের লিখার বিষয়টার সাথে উপরের ঘটনার সরাসরি কোন কানেকশন নেই, তবে ভাবনার যায়গা থেকে কিছুটা মিল আছে। আমরা একটা অবজেক্টকে কিভাবে ভাবছি তা আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। একই জিনিশ হয়ত কারো জন্য সমস্যা আবার কারো জন্য উদ্ভাবনের যায়গা।
আমরা প্রতিদিন এমন অনেক কিছুর সাথেই কানেক্টেড হই যেখানে আমাদের আসলে করার কিছু থাকে না। কখনো বিষয়টা ক্ষুদ্র আবার কখনো বড়। আবার এই বিষয় গুলাই আমাদের প্রফেশনাল এবং পারিবারিক সফলতার সাথে অনেকটাই জড়িত। যেমন ধরুন ট্রাফিক জ্যাম। আশে পাশের মানুষের বিহ্যাভিয়ার, নেগেটিভ থিঙ্কিং সহ আরো অনেক কিছু।
ধরেন আপনি অফিসের উদ্যেশ্যে রওনা দিলেন। পথে ভয়ানক জ্যাম, ধুলা বালি। বাসে ঠাসা ঠাসি অবস্থা। আপনি অফিসে যাওয়ার আগেই আপনার মেজাজ তেলে বেগুন। এই তেলে বেগুন মেজাজে প্রোডাক্টিভ হওয়া সম্ভব না। তারমানে আপনার মোস্ট প্রোডাক্টিভ টাইমটাই হয়ে যাচ্ছে লেস প্রোডাক্টিভ। যেহেতু আমরা মানুষ তাই আমাদের পক্ষে ইমোশনকে বাদ দেয়া সম্ভব নয়। আর তা করার চেষ্টা করাও উচিত নয়। তবে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করা উচিত।
আমরা যখনই এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়বো, যেখান থেকে পারত পক্ষে আমার বের হওয়া সম্ভব নয়, তখন ইমোশনকে কন্ট্রোল করতে হবে। আর এই কন্সেপটাই হচ্ছে আই কান্ট চ্যাঞ্জ কন্সেপ্ট।
আপনি যদি সেলফ ডেভেলপমেন্ট নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করেন দেখবেন এই কন্সপেটটাই ঘুড়ে ফিরে আসবে। এক এক জন এটাকে এক এক ভাবে সংগায়িত করেছেন। তবে মুল গোলটা একই আর তা হচ্ছে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা।
আরো পড়ুনঃ
যখনই আপনি দেখছেন এমন কোন একটা অবস্থার মধ্যে আপনি আছেন, যেখান থেকে আপনার আপাত দৃষ্টিতে বেড় হবার কোন সুযোগ নেই, অথবা আপনাকে অবস্থাটা ফেস করতেই হবে, তখন নিজেকে নিজে মনে মনে বলবেন আই কান্ট চেঞ্জ ইট। এটা কয়েকবার বলতে পারেন মনে মনে। দেখবেন অনেকটাই কুল ফিল হচ্ছে। যখন কুল ফিল হওয়া শুরু হয়েছে তখন আপনি ভাববেন কিভাবে এই বিরক্তিকর অবস্থার মধ্যে থেকেও ভাল কিছু করা যায় যা আপনাকে বেটার ফিলিং দিবে এবং আপনার গ্রোথ হ্যাকিং এ সহায়তা করবে।
উদাহরন যদি দেই, আপনি জ্যামে বসে থাকা অবস্থাতে বই পড়তে পারেন, পোডকাস্ট শুনতে পারেন। অফিসের কিছু কাজের প্লানিং করতে পারেন।
ফাইনানশিয়াল স্ট্রেসে আছেন, একই ভাবে আপনি চিন্তা করতে পারেন, কিভাবে উপার্জন বাড়ানো যায়, আমার ভেতরে এমন কি আছে যার মার্কেট ভ্যালু আছে, যা আমি সেল করতে পারি। অথবা কিভাবে কস্ট মিনিমাইজ করা যায়।
অফিস পলিটিক্সের বলি হচ্ছেন, বিকল্প সলিউশন ভাবতে শুরু করুন।
মুল কথা হচ্ছে যেহেতু প্রবলেমটা আপনাকে ফেস করতেই হচ্ছে তাই সবার প্রথমে আই কান্ট চ্যাঞ্জ ইট, এইটা ভেবে মাথা ঠান্ডা করুন, দেখবেন সলিউশন মাথার মধ্যে থেকেই উকি দিয়ে বের হচ্ছে। মনে মনে দুই তিনবার এটা বলে দেখুন বেটার ফিল হয় কিনা। আল্লাহ ধৈর্য শীলদের সাথে থাকেন।
এটি খুবই ছোট একটি পোস্ট, কিন্তু এই স্বভাবটা রপ্ত করতে পারলে অনেক বেটার রেসাল্ট পাওয়া যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ফেসবুক পোস্ট লিখতে গিয়ে ব্লগ পোস্ট লিখে ফেললাম। আপনাদের ফিডব্যাকের অপেক্ষায় আছি।