মার্কেটারদের সবসময় ক্রিয়েটিভ আইডিয়া জেনারেট করতে হয়। আবার এটাও মনে রাখতে হবে, আইডিয়া ঘরে বসে বসে পাওয়া যায় না। মাথায় আইডিয়া আসে সিমিলার কোন কিছু দেখে, শুনে, অথবা ফিল করে। যেমন ধরেন আপনি টিভিতে গ্রামিন ফোনের বিজ্ঞাপন দেখছেন। সেখানে আপনি তাদের স্লোগান শূনলেন, দূরত্ব যতই হোক কাছে থাকুন। এটা শোনার পর আপনার মাথায় একটা আইডিয়া চলে আসতে পারে। ধরে নিলাম আইডিয়াটা হচ্ছে, এই দূর দূর নয়, আরো দূর আছে 😛
আবার এমন আইডিয়াও আসতে পারে, আপনার ক্লায়েন্ট যত দুরেই থাকুক, আমাদের মার্কেটিং ক্যাম্পেইন তাকে রিচ করবেই 😛
যাই হোক এইগুলো কপি করার দরকার নেই, উদাহরন হিসেবে দেয়া। তাই এইগুলোর দোষ গুন ত্রুটি নিয়ে ভাবার দরকার নেই। মুল কথাটা বুঝলেই হচ্ছে।
তার মানে আমাদের মাথায় কোন আইডিয়া তখনই আসে যখন আমরা কোন কিছু দেখি, শুনি অথবা ভাবি। আপনি যত বেশি মুভ করবেন, তত বেশি দেখার এবং শোনার সুযোগ হবে। তারমানে সেই অবজেক্টিভ গুলো নিয়ে তত বেশি ভাবতে পারবেন। আর এ কারনেই আপনার একজন মার্কেটার হিসেবে বেশি বেশি ঘুরাঘুরি করা উচিত।
আমরা আসলে কতদুর যাব তা অনেকটাই নির্ভর করবে আমরা কি করছি, কিভাবে ভাবছি তার উপর। অনেক সময় আমাদের পটেনশিয়ালিটি থাকার পরেও আমরা পর্যাপ্ত রিটার্ন জেনারেট করতে পারিনা। এই পোস্টে আমি এমন ৬ টি অভ্যাস নিয়ে লিখবো, যা বেশির ভাগ সফল প্রফেশনালদের মধ্যে আছে। তাই আমি আপনি ধরে নিতে পারি, এই অভ্যাস গুলো রপ্ত করতে পারলে আমরাও অনেকটা সিমিলার রিটার্ন জেনারেট করতে পারবো।
১# ট্রাভেলিং
সহজ ভাবে বললে বলতে হবে আমরা যত ঘুড়বো, তত শিখবো। যত বেশি মানুষের সাথে মিশবো, যত বেশি সমস্যা এবং সমাধান সম্পর্কে জানতে পারবো, তত ভাল করার সুযোগ থাকবে। তবে শুধু ঘুড়লেই হচ্ছে না, এটাকে সিস্টেমেটিক করতে হবে। যা জানলাম তা যখন ইমপ্লিমেন্ট করলাম তখন আসলে আমরা শিখলাম। তাই যখনই আমরা ঘুড়তে ঘুড়তে কিছু ডিস্কভার করলাম, আমাদের সেই ডিস্কভার করা কনসেপ্টটিকে আমাদের নিজেদের বিজনেসের সাথে ইমপ্লিমেন্ট করার চেষ্টা করতে হবে। অন্যথায় আপনি শুধু জেনেই যাবেন কিন্তু তা তেমন কোন কাজে আসবে না।
গ্লোবাল বিজনেসের সাথে কানেক্টেড থাকলে ওভার সীস ট্রিপ দেয়াটাও জরুরী।
২# ডাটা ট্রেকিং
একজন সাধারন মানুষ এবং মার্কেটারের মুল ব্যাবধান গুলোর একটা হচ্ছে ডাটা ট্রাকিং। একজন মার্কেটার সব সময় এ/বি টেস্টিং করে থাকে। মার্কেটে এভেইলেবল ডাটা এনালাইসিস করে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করে, এবং সেই অনুযায়ি কাজ করে। তাই আমাদের মার্কেট থেকে প্রাপ্ত ডাটা এনালাইসিস এর সাথে সাথে নিজেদের কেও ডাটা ট্র্যাক করার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। যেমন ধরেন, আপনি কোন একটা লিঙ্ক শেয়ার করলেন, আপনি চাইলেই শর্ট লিঙ্ক ব্যাবহার করে ক্লিক এর সংখ্যা, লোকেশন, সোর্শ সহ বেশ কিছু ডাটা পাওয়া যাবে। একই ভাবে প্রয়োজন মত সার্ভে করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
নিজের এক্টিভিটি ট্র্যাক করার জন্য আপনারা চাইলে রেস্কিউটাইম ব্যাবহার করতে পারেন। বিস্তারিত জানতে নিচের ভিডীওটি দেখতে পারেন।
৩# বেশি মানুষের সাথে মেশা
যত বেশি মানুষের সাথে মিশবেন তত শেখার সুযোগ থাকবে। তবে নিজের চাইতে বেশি জানে এই ধরনের মানুষের সাথে মেশার চেষ্টা করা উচিত। আপনি মুলত যেই দশ জন মানুষের সাথে নিয়মিত মিশে থাকেন, আপনি তাদের এভারেজ। ফাইনানশিয়াল কন্ডিশন, মেন্টালিটি, আপনার চিন্তা ভাবনা সব তাদের দ্বারা প্রভাবিত হবে। তাই একজন মার্কেটার হিসেবে আমাদের অবশ্যই আমাদের চাইতে বেশি জানে, এমন মানুষদের সাথে মেশার চেষ্টা করা উচিত।
৪# মাথায় যখন যা আসছে, নোট করে ফেলা, নয়ত পরে ভুলে যেতে হবে
ধরেন আপনি কোন এক সেমিনারে গেলেন। একটা ভ্যালুয়েবল সেশন শুনলেন। অনেক কিছু জানলেন। সেই ইভেন্ট শেষে বাসায় আসতে আসতে আপনি দেখবেন সেই সেশনের ৮০ ভাগ আপনার মনে আছে। পরের দিন সকালে মনে থাকবে ৫০ ভাগ। ২ দিন পর ১০/২০ ভাগের বেশি আপনি মনে রাখতে পারবেন না। এক সপ্তাহ পর হয়ত এটা ১/২ ভাগ হবে। এটাই স্বাভাবিক। কেননা আপনি প্রতিদিন নতুন নতুন কাজে ইনভল্ভ হচ্ছেন, নতুন কিছু নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। রুটিন ওয়ার্কতো আছেই। তাই আমাদের সবসময় গুরুত্ব পুর্ন পয়েন্ট গুলো নোট করে রাখা উচিত। যখন আমরা গুরুত্ব পুর্ন অংশগুলো নোট করে রাখি, এবং সেই অংশটা দেখি, তখন আমাদের সেই অংশ রিলেটেড ঘটনাটা মনে পড়ে যায়, এবং আমরা একশনে যেতে পারি।
নোট রাখার জন্য যে কোন টুডু লিস্ট এপ ব্যাবহার করতে পারেন, অথবা মোবাইলের ডিফল্ট নোট টুল ব্যাবহার করা যেতে পারে।
৫# ইভেন্ট গুলোতে পার্টিসিপেট করা
আমরা অনেকেই ইভেন্ট গুলোর গুরুত্ব উপলব্ধি করি না। এর পেছনের একটা কারন হচ্ছে, আমরা অনেক সময় দেখি যে ইভেন্টে যা বলা হচ্ছে তার ৮০ ভাগ জিনিশই হয়ত আমি আগে থেকেই জানি। আর এই কারনেই আমরা অনেক সময় আগ্রহ হাড়িয়ে ফেলি। কিন্তু মজার বেপার হচ্ছে ৮০-২০ রুল আসলে সব জায়গাতেই কাজ করে। যেই ২০ ভাগ জিনিশ আপনি জানেননা তাই হয়ত পার্থক্য তৈরি করবে। একটা ইভেন্ট থেকে আপনি যদি সবকিছুই নিয়ে আসেন, তাহলে বুঝবেন এটা কোন কাজে লাগবে না। একটা ডে লং ইভেন্ট থেকে আপনি হয়ত এমন কয়েকটা হিডেন ট্রিক ডিসকভার করবেন যা লাইফ চ্যাঞ্জিং। এখন আমাদের সমস্যা যেটা হয় তা হচ্ছে আমরা ডিসকভার করি, কিন্তু কাজ করি না। আর তাই আমরা পরিপুর্ন জুসটা নিতে পারিনা। এরকম হিডেন ট্রিক গুলো তখনই কাজ করবে যখন আপনি তা পুরাপুরি ইউটিলাইজ করবেন এবং তাকে ঘিড়ে নিজের স্ট্র্যাটেজি তৈরি করবেন।
৬# নিজের সাথে নিজেকে কম্পিট করা
আগে আমি একটা আর্টিকেল লিখতে কি পরিমান সময় নিতাম, আর এখন কি পরিমান নেই। আগের লিখার কোয়ালিটি আর বর্তমান লিখার কোয়ালিটি। এই জিনিশ গুলো আপনি যত এনালাইসিস করবেন, তত ভাল করার সম্ভাবনা থাকবে। একজন মার্কেটার এর জন্য ডাটা এনালাইসিস এর বিকল্প নেই। আর আপনার কাজের / পন্যের বর্তমান অবস্থা যত ভালই হোক না কেন, আপনাকে সবসময় এর ইম্প্রুভমেন্ট নিয়ে ভাবতে হবে। জাপানি একটা টার্ম আছে, KAIZEN, যার অর্থ হচ্ছে কন্টিনিউয়াস ইম্প্রুভমেন্ট। আপনার উচিত নিজের সাথে নিজের কম্পিট করা, প্রতিনিয়ত করা, প্রতিদিন একটু একটু করে নিজের বেস্ট ভার্ষনটাকে আইডেন্টিফাই করা।
নিজের বেস্ট ভার্ষন আইডেন্টিফাই করার ক্ষেত্রে হয়ত কিছু টুল আপনাদের সাহায্য করতে পারে। এই ভিডিও থেকে কিছু টুল রিলেটেড ইনফো পাবেন।
আরো পড়ুনঃ তুলনা করার বাজে স্বভাবের সঠিক ব্যাবহার কিভাবে করবেন?
আমার ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে এখানে ক্লিক করুন।