সোশ্যাল মিডিয়ার “দ্য বিগ থ্রী” প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ইন্সটাগ্রাম !
২০১০ সালের ইন্সটাগ্রাম লঞ্চ হওয়ার পর অনেক কম সময়ের মধ্যেই এই প্ল্যাটফর্মটি বেশ ভালোই পপুলারিটি পেয়েছে। আগে ইন্সটাগ্রামকে শুধু ফান ফিল্টার দিয়ে ফটো তোলার জন্য সবাই ব্যবহার করতো। কিন্তু এখন ইন্সটাগ্রামে স্টোরি থেকে শুরু করে, IGTV তে লং ভিডিও, রিলস ও শেয়ার করার অপশন এড হয়েছে।
গত ২০২২ থেকে ক্রিয়েটর এবং ইনফ্লুয়েন্সরদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য ইন্সটাগ্রাম মার্কেটপ্লেসে বিভিন্ন ফিচার এড করেছে যেমন সাবস্ক্রিপশন, এচিভমেন্ট, ক্রিয়েটর পোর্টফলিও এবং রিলস বোনাস প্রোগ্রাম।
আর বিভিন্ন ব্র্যান্ড এই আপডেটেড ফিচারগুলো ব্যবহার করে তাদের রিচ এবং এঙ্গেজমেন্ট বাড়াতে পারে এবং সাথে একটা কমিউনিটিও বিল্ড করতে পারে।
তাই ইন্সটাগ্রামের ডেমোগ্রাফিক এবং এর ফিচারগুলো আরো ভালোভাবে জানতে ইন্সটাগ্রামের স্ট্যাটিসটিকস সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি, বিশেষ করে মার্কেটারদের জন্য।
কিছু স্ট্যাটিসটিকস দেখলে ইন্সটাগ্রামের বর্তমান সিচুয়েশন এবং পরবর্তী এক বছরে কি কি পরিবর্তন আসতে পারে, সে সম্পর্কে আইডিয়া পাওয়া যাবে।
এক নজরে বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্ট্যাটিসটিকস গুলো দেখে নেওয়া যাকঃ
- ইন্সটাগ্রাম ইউজার স্ট্যাটিসটিকস
- ইন্সটাগ্রাম ইউসেজ স্ট্যাটিসটিকস
- ইন্সটাগ্রাম অডিয়েন্স এবং ডেমোগ্রাফিক স্ট্যাটিসটিকস
- ইন্সটাগ্রাম এডভার্টাইজিং এবং মার্কেটিং স্ট্যাটিসটিকস
- ইন্সটাগ্রাম স্টোরিজ এবং রিলস স্ট্যাটিসটিকস
- ইন্সটাগ্রাম বিজনেস স্ট্যাটিসটিকস
- ইন্সটাগ্রাম এড স্ট্যাটিসটিকস
- ইন্সটাগ্রাম ইউজার স্ট্যাটিসটিকস
অডিয়েন্সরা কীভাবে ইন্সটাগ্রাম এক্সেস করছে এবং ইউজ করছে এই ইনফরমেশনগুলো আপনাকে অডিয়েন্স সম্পর্কে আরো ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করবে।
১. ইন্সটাগ্রামে ২ বিলিয়নেরও বেশি এক্টিভ ইউজার রয়েছেঃ
মেটার তথ্য অনুসারে মাসে ২ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ ইন্সটাগ্রাম ইউজ করছে। আর এই বিপুল পরিমাণ ইউজারদের মধ্যে ইউএসএ, ইন্ডিয়া সবচেয়ে বেশি এগিয়ে।
২. ইন্সটাগ্রামের ৫২% অডিয়েন্স হচ্ছে মেল(পুরুষ) অডিয়েন্সঃ
বাকি ৪৮% হচ্ছে ফিমেল (মহিলা) অডিয়েন্স। মেটা রিপোর্টিং এ এখন পর্যন্ত শুধু মেল আর ফিমেল এর অপশন রয়েছে। গত বছরের তথ্য অনুযায়ী ইন্সটাগ্রামে মেল অডিয়েন্স এর সংখ্যা একটু বেশি ই ছিল। কিন্তু যে কোন অডিয়েন্স এর জন্য ইন্সটাগ্রাম একটা গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম।
৩. প্রায় সব ইন্সটাগ্রাম ইউজাররাই অন্যান্য প্লাটফর্মে এক্টিভঃ
২০২২ সালের ডাটা অনুযায়ী সোশ্যাল মিডিয়া ইউজার এর একটা বড় অংশ ইন্সটাগ্রামের পাশাপাশি অন্যান্য প্লাটফর্ম ও ইউজ করে থাকে যেমন ফেসবুক ৮২.৯% মানুষ ব্যবহার করছেন, ইউটিউব ৭৫.৫% এবং টিকটক ৫২.২% ইউজাররা ব্যবহার করছেন।
৪. ফটো/ভিডিও রেগুলার পোস্ট করাঃ
প্রায় ৬৯.৭% ইউজাররা ফটো বা ভিডিও পোস্ট এবং শেয়ার করার জন্য ইন্সটাগ্রাম ইউজ করে থাকে। আর এই বিপুল পরিমান ইন্সটাগ্রামে পোস্টিং এর জন্য সবাই আরো ক্রিয়েটিভ এবং এক্সপ্রেসিভ কন্টেন্ট আপলোড করতে আগ্রহী হচ্ছে।
৫. কাস্টমার সার্ভিসের জন্য ইন্সটাগ্রাম দ্বিতীয় জনপ্রিয় প্লাটফর্মঃ
বর্তমানে কাস্টমার সাপোর্টের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া অনেক পপুলার একটা মাধ্যম আর এখন বেশিরভাগ মানুষ কাস্টমার সার্ভিসের জন্য ইন্সটাগ্রাম ইউজ করে। ২০২২ সালের এক সার্ভে অনুসারে ইউএসএ এর প্রায় ৩৫% কাস্টমার ইন্সটাগ্রামকে বেছে নিয়েছে কাস্টমার সার্ভিসের জন্য যেটা ফেসবুকের পর কাস্টমার সাপোর্টের জন্য দ্বিতীয় পপুলার প্লাটফর্ম।
- ইন্সটাগ্রাম ইউসেজ স্ট্যাটিসটিকস
৬. প্রতি মাসে ইউজাররা ১১.৭ ঘন্টা ইন্সটাগ্রামে সময় স্পেন্ড করেঃ
অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ইউটিউব, টিকটক, ফেসবুক, হোয়াটস এপ এর পর ইন্সটাগ্রামেই মানুষ বেশি সময় কাটায়। কিন্তু যেটাই হোক না কেন, এই সময়টা বলতে গেলে মাসে প্রতিদিন হাফ বেলা করে অডিয়েন্স ইন্সটাগ্রামে এক্টিভ থাকে।
৭. আমেরিকানরা প্রতিদিন গড়ে ৩০ মিনিট করে ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করেঃ
গত কয়েক বছরে ইউটিউব, টিকটক এর মতো ভিডিও বেসড প্ল্যাটফর্মগুলো সোশ্যাল মিডিয়া জগতে বেশ পপুলারিটি পেয়েছে। কিন্তু তারপরেও ইউজাররা প্রতিদিন একটা ভালো সময় ইন্সটাগ্রামে কাটায়। প্রাপ্ত বয়স্ক আমেরিকানরা প্রতিদিন প্রায় ৩০ মিনিট ধরে এই প্লাটফর্মে এক্টিভ থাকে।
- ইন্সটাগ্রাম অডিয়েন্স এবং ডেমোগ্রাফিক স্ট্যাটিসটিকস
৮. ইয়াং জেনারেশনের মধ্যে ইন্সটাগ্রাম বেশি পপুলারঃ
১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ইউজাররা এই প্লাটফর্ম বেশি ইউজ করে। এই গ্রুপের অডিয়েন্সরাই ইন্সটাগ্রামের প্রায় ৬০% ইউজার হিসেবে একটা বড় অংশ দখল করে আছে। তাই যাদের টার্গেট অডিয়েন্স হচ্ছে ইয়াং জেনারেযে, তাদের জন্য ইন্সটাগ্রাম একটা পারফেক্ট প্লাটফর্ম।
৯. ইন্ডিয়া এবং ইউনাইটেড স্টেটস এ সবচেয়ে বেশি ইন্সটাগ্রাম ইউজারঃ
অন্যান্য প্লাটফর্মের মত ইন্সটাগ্রামের ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বেশি ইউজার ইন্ডিয়াতে রয়েছে। ইন্ডিয়াতে প্রায় ২২৯.৫ মিলিয়ন ইন্সটাগ্রাম ইউজার আছে বর্তমানে আর ইউনাইটেড স্টেটস এ ১৪৯.৪ মিলিয়ন ইউজার এক্টিভ আছে।
- ইন্সটাগ্রাম এডভার্টাইজিং এবং মার্কেটিং স্ট্যাটিসটিকস
১০. ইন্সটাগ্রামে সিপিসি (কস্ট পার ক্লিক) সবচেয়ে বেশিঃ
এঙ্গেজমেন্টের ক্ষেত্রে ইনস্টাগ্রামের অন্যান্য সামাজিক প্ল্যাটফর্মের তুলনায় কিছু সুবিধা থাকতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে এডভার্টাইজিং এর জন্য ইন্সটাগ্রামে বেশি কস্টিং পড়বে। ইনস্টাগ্রাম এডস এর এভারেজ CPC হল $3.56 যেখানে Facebook, Twitter এবং Pinterest এর মত প্ল্যাটফর্মগুলি $2-এর কমে ম্যানেজ করে।
১১. কনভার্শন রেট ০.৩০% থেকে ২.৬%
যেসব ব্র্যান্ড এর রিচ বেশি, তাদের কনভার্শন রেট ও অনেক বেশি হতে দেখা গিয়েছে। এমনকি যেসন ব্র্যান্ডের ১০,০০০ এর ও কম ফলোয়ার রয়েছে তাদের হায়েস্ট কনভার্শন রেট ছিলো ২.৬% যেখানে অনেক টপ ব্র্যান্ড এর ক্ষেত্রে মাত্র ১% কনভার্শন রেট ছিলো।
- ইন্সটাগ্রাম স্টোরিজ এবং রিলস স্ট্যাটিসটিকসঃ
১২. শর্ট ন্যারেটিভ-টাইপ স্টোরিজ সবচেয়ে বেশি পপুলার ফরম্যাটঃ
বেশিরভাগ অডিয়েন্স ন্যারাটিভ টাইপের স্টোরি দেখতে পছন্দ করে। প্রায় ৩৫% মানুষ এমন স্টোরিগুলো দেখে যেখানে বিভিন্ন ফটো, ভিডিও এবং টেক্সট এর একটা মিনিংফুল কম্বিনেশন আছে। আবার যেসব স্টোরিতে কুইজ বা পোলস থাকে, সেগুলো ও অডিয়েন্সদের মনে একটা কিউরিওসিটি তৈরি করে।
১৩. রিলস এর রিচ সবথেকে বেশিঃ
সব টাইপের পোস্ট থেকে বেশি রিচ হয়ে রিলস থেকে, এমন টাই ধারণা সোশ্যাল মিডিয়া সার্ভে গুলোর। এক স্টাডি অনুযায়ী, ইন্সটাগ্রামের এভারেজ রিলস রিচ হচ্ছে ২০.৬% যা অন্যান্য মিডিয়া টাইপ যেমন ক্যারোসেল, ফটো বা ভিডিও থেকে অনেক গুণ বেশি।
১৪. প্রতিদিন ১ বিলিয়নেরও বেশিবার DM এর মাধ্যমে রিলস শেয়ার করা হয়ঃ
যারা আপনার বা আপনার ব্র্যান্ডকে ইন্সটাগ্রামে ফলো করেনা, তাদের কাছেও আপনার রিলসগুলো পৌছে যায় আর শেয়ার করা হয়। আর এভাবেই, রিলস আপনার রিচ এক্সপান্ড করতে হেল্প করবে।
- ইন্সটাগ্রাম বিজনেস স্ট্যাটিসটিকস
১৫. ৭০% অডিয়েন্স কেনাকাটার জন্য ইন্সটাগ্রামকে ফলো করেঃ
ইন্সটাগ্রামের ডাটা অনুযায়ী, প্রায় ৭০% ক্রেতা তাদের পছন্দের জিনিস কেনার জন্য ইন্সটাগ্রামের উপর ডিপেন্ড করে। এক কথায়, ইন্সটাগ্রামে মানুষ প্রোডাক্টগুলো কিনতে ইন্সপায়ার্ড হয় এবং অন্যান্য অনেক ট্রেন্ডি বা নতুন প্রোডাক্টস এই প্ল্যাটফর্মে খুজে পায়।
১৬. ব্র্যান্ড ফলোয়িং এবং রিসার্চ এর জন্য দ্বিতীয় পপুলার প্ল্যাটফর্মঃ
ডাটারিপোর্টাল এর তথ্য অনুসারে, অনেক ইউজাররা বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং প্রোডাক্ট সম্পর্কে রিসার্চ করার জন্য তাদেরকে ইন্সটাগ্রামে ফলো করে। আর এই রিসার্চ এবং ফলোয়িং এর ব্যাপারটা সোশ্যাল মিডিয়া জগতে সেকেন্ড পপুলার এক্টিভিটি যেখানে প্রায় ৬৩% ইউজার এখানে ইনভল্ভড আছে।
১৭. বিজনেস একাউন্টগুলো গড়ে প্রতিদিন ২ টা পোস্ট দেয়ঃ
পোস্টিং এর ফরম্যাট অনেকটা এমন হয় যে মেইন ফিডের প্রায় ৪৯% ইমেজ পোস্ট করে, ৩২% ভিডিও এবং ১৯% হচ্ছে ক্যারোসেল পোস্ট করে। একটা ইম্পরট্যান্ট বিষয় হচ্ছে যে, ভিডিও পোস্টিং এর পার্সেন্টেজ গত বছরের তুলনায় ১৬% বেশি বেড়েছে। তাই যদি শুধু ইমেজ টাইপ কন্টেন্ট এর উপর ফোকাস করা হয় তাহলে পোস্টিং স্ট্র্যাটেজিতে ইম্প্রুভমেন্ট আনতে হবে।
- ইন্সটাগ্রাম এড স্ট্যাটিসটিকস
১৮. ৭৯% ইন্সটাগ্রাম ইউজাররা এড সম্পর্কে জানার জন্য এড ক্লিক করেঃ
ফেসবুকের তথ্য অনুযায়ী, ৭৯% ইউজার যারা ইন্সটাগ্রামে এড দেখেন তারা ঐ এড সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে এড এ ক্লিক করেন। তাই ব্র্যান্ড ওনার এবং মার্কেটারদের তাদের প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস প্রমোট করতে ইন্সটাগ্রাম এড সম্পর্কে ভালোভাবে জানা উচিত।
১৯. ২০২৩ সালে ইন্সটাগ্রামের এড রেভেনিউ $৫০.৫৮ বিলিয়ন ডলার হতে পারেঃ
যদিও ইন্সটাগ্রামের এড রেভেনিউ ফেসবুকের ( $৭১.৩২ বিলিয়ন) থেকে কম কিন্তু এর শেইয়ার দিন দিন বেড়েই চলছে। কারণ ফেসবুকের এড রেভেনিউ ফল করছে আর অন্যদিকে ইন্সটাগ্রামের রেভেনিউ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০. ৩৮% মার্কেটাররা ব্র্যান্ড এওয়ার্নেস এর জন্য ইন্সটাগ্রাম এড ব্যবহার করেঃ
মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ডিং এর জন্য ইন্সটাগ্রাম অনেক পাওয়ারফুল একটা প্ল্যাটফর্ম। মার্কেটাররা নিস অনুসারে তাদের টার্গেটেড অডিয়েন্সদের ইন্সটাগ্রামে এড দেখিয়ে ব্র্যান্ড এওয়ার্নেস তৈরি করতে পারে। মোট কথা হলো, ইন্সটাগ্রাম যদি আপনার প্রাইমারি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম হয় আর আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্স যদি ইন্সটাগ্রামে বেশি এক্টিভ থাকে, তাহলে এখান থেকে ভালো ব্র্যান্ড এওয়ার্নেস এবং সেল জেনারেট করা অনেক সহজ হবে।
ইন্সটাগ্রামের এই স্ট্যাটিসটিকস এর উপর নির্ভর করে আপনার একটা ইনিশিয়াল ধারণা হতে পারে যে বর্তমানে এই প্ল্যাটফর্ম টার কন্ডিশন কেমন এবং কীভাবে মানুষ এই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে। যদিও ইন্সটাগ্রাম বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম হতে পারেনি কিন্তু নিঃসন্দেহে এটা একটা পাওয়ারফুল প্ল্যাটফর্ম। তাই ওভারঅল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজির কথা ভাবতে গেলে ইন্সটাগ্রামকে অবশ্যই কন্সিডার করা উচিত বলে আমি মনে করি।